আমার লেখালেখি মূলত শুরু হয়েছিল হাসান হাফিজুর রহমানের কল্যাণে। তিনি তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র আর আমি তখন ক্লাস নাইনের ছাত্র। হাসান হাফিজুর রহমানের সঙ্গে আমার সখ্য গড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ব্যাডমিন্টন খেলা। আমরা তখন বিকেল হলে পাকিস্তান মাঠে দল বেঁধে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। শামসুর রাহমান, মুর্তজা বশীর, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ কিবরিয়াসহ আরও অনেকে ব্যাডমিন্টন খেলতে আসত। খেলার মাঠে আমরা তখন অনেক মজা করতাম। তখন ঢাকা শহরের আয়তনও ছিল খুব ছোট। সে সময় ফুলবাড়িয়া রেললাইন ক্রস করার মানে হল আমাদের সামনে যেন নতুন এক পৃথিবী উন্মোচিত হল।’
তথ্যসূত্র / আমরা অর্ধেক মুসলমান, অর্ধেক সেক্যুলার, অর্ধেক নন সেক্যুলার…- বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সাপ্তাহিক ২০০০, বর্ষ ১৫, সংখ্যা ৩৫ পত্রিকাটির বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে লেখক,কথাসাহিত্যিক, শিল্পবোদ্ধা বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের একটি সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য তাঁর গুলশানের বাসায় যাই ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের কোনো এক বিকেলে। অনেক কথা বললেন তিনি। অসম্ভব গুছিয়ে কথা বলার মানুষ। তাঁর ড্রয়িং রুমের বারান্দা থেকে গুলশান লেক পুরোটা দেখা যায়। রুমের দেয়ালে বিখ্যাত সব শিল্পীদের বিখ্যাত সব শিল্পকর্মের বাঁধানো ছবি। কার ছবি নেই সেখানে!
সাক্ষাৎকার শেষে আমি সাহস করে আমার একটা বই তাঁকে দিলাম। তিনি গল্পের বইয়ের নামটা দেখে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ইও নলো সো- অর্থ কি?
ইতালিয়ান ভাষায় এর মানে হলো,আমি জানি না। কিন্তু বলব কীভাবে! তাঁকে বুঝিয়ে বলার পর তিনি হেসে বললেন,নামটা ভালো।
দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন- চলে আসার সময় তিনি যেন কি মনে করে আমাকে বললেন, ‘তুমি তো গল্প লেখো, তাই না?’
‘জি-‘ বলে থতমত খেলাম, তারপর দাঁড়িয়ে পড়লাম।
‘মানে,তুমি কিভাবে গল্পটা লেখো?’
আমি তাঁর প্রশ্নে আসলেই থতমত খেয়ে যাই। তাঁকে দেখে মনে হলো একজন অগ্রজ তাঁর অনুজের কাছে জানতে চাইছেন সে কিভাবে গল্প লেখে। এরকম অভিজ্ঞতা আমার সেই প্রথম।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর – আমি তাঁর অনেক গল্পের, অনেক লেখার মুগ্ধ পাঠক।
আমি তাঁর প্রশ্নে সত্যি সত্যি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম।
কি বলব তাঁকে!
সেদিন তাঁর প্রশ্নের বিপরীতে আমি আসলে কি বলেছিলাম তা পুরো মনে নেই তবে সম্ভবত এরকম কিছু বলেছিলাম, ‘ আগে গল্পটা ভাবি তারপর লিখি-‘
আমার কথায় তিনি হাসলেন, ‘ সমস্যাটা এখানেই- এখনকার গল্পে সেই ব্যাপারটাই ধরা পড়ছে। ভেবে গল্প লেখার কোনো সুযোগ নেই। গল্পটা আসলে ভাবার বিষয় না বুঝলে? গল্পটা আগে জানতে হয় তারপর লিখতে হয়। না জানলে গল্পটা লিখবে কোত্থেকে!’ বলে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা হালকা হাসি টেনে এনে আমাকে বিদায় দিলেন।
আমি বিদায় নিয়ে লিফটে ঢুকে পড়লাম। লিফট এসে নামল নিচে।সন্ধ্যা অতিক্রান্ত সময়ে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে আমার চোখে ভেসে উঠছিলেন তিনি আর তাঁর কথা বারবার আমার কানে এসে ঘাই মারছিল,’গল্পটা আগে জানতে হয় তারপর লিখতে হয়-‘