মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেন ক্রমশই শুধু আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশগড়ার কাজে বা প্রকৃত অর্থে আমরা এই দিবসগুলোতে দেশ গড়ার কাজে নিজেদের নিয়োগ করি না। শুধু যেন আপ্তবাক্যের জন্য আমাদের এই দেশ স্বাধীন হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলতে হয়। যা আমাদের জন্য শতবছর পরও শিক্ষনীয় হতে পারে। সোভিয়েট ইউনিয়নে কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা লেনিনের কাছে গিয়ে তার জন্মদিন পালনের কথা বলেছিলেন। লেনিন তখন তাদের বলেছিলেন: তার জন্মদিনের দিন নয় বরং নিকটবর্তী শনিবার স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রাস্তাঘাট এবং পার্ক পরিষ্কার করতে হবে। নেতার জন্মদিন পালনের কী অসাধারণ একটি সংস্কৃতি! যাতে দেশের গরিব হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আছে উন্নতি হওয়ার সংস্কৃতি। আমাদের দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে রয়েছে গর্বের ইতিহাস এবং অনেক মানুষের আত্মত্যাগ। আমরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। ৭ মার্চের ভাষণ, সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে দেশকে শত্রুমুক্ত করা—এর প্রতিটা ঘটনা নিয়েই যে কোন জাতি গর্ববোধ করতে পারে। দেশ স্বাধীন আজ ৫১ বছর। বিদেশি বড় বড় অর্থনীতিবিদকে অবাক করে দিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশটি অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় যখন উন্নত দেশগুলো দিশেহারা, তখন হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র বিশেষণকে ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটিয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ এখন আমাদের সামনে। শহরভিত্তিক নয় এমন দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনঘনত্ব আমাদের। পৃথিবীর গড় জনঘনত্বের চব্বিশ গুণ বেশি, জনবহুল ভারত থেকে তিন গুণ এবং সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন থেকে আট গুণ জনঘনত্বের দেশটিতে স্বভাবতই মাথাপিছু প্রাকৃতিক সম্পদ কম। এত কম মাথাপিছু প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে একটি মানবশিশুকে মানবসভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত করার কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ সফলভাবে মোকাবেলা করেছে।
আমাদের জাতীয় দিবস অনেক। এই দিনগুলোতে দেশের উন্নয়নে যাতে নিরলসভাবে কাজ করি, তার শপথ গ্রহণ করতে হবে। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাদের এই দিবসগুলো অনেকটা লৌকিকতা পালনের মত হয়ে গেছে। নিজেরা দেশগড়ার কাজে উজ্জীবিত হচ্ছি না। অনেক কাজ রাজধানীসহ অন্যান্য মহানগরের ছাত্ররা, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে পারে আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে। নিছক লৌকিকতার জন্য দিবস পালন অর্থহীন। যদি না তা জাতির কোন অগ্রগতির কাজে লাগে।