ব্রিটিশ পদার্থবিদ অধ্যাপক স্টিফেন হকিং মারা গেছেন। বুধবার সকালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। এই প্রসঙ্গে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন কলকাতার কবি ও গীতিকার শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন-
‘আমি অনেকদিন পর্যন্ত ভাবতাম, স্টিফেন হকিং একজন কবি। চুপচাপ একটা নিচু শহর থেকে মহাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা একজন কবি, যার হাসি মোছাতে কোনও পরিচারিকা আসেননি। রাতের খাবারে তাঁর প্লেটে উঠে এসেছে নক্ষত্রখণ্ড কোনও, অথবা ছোট ছোট উল্কার সবজি।
আমি তখনও ভাবতাম, স্টিফেন হকিং একজন কবি। বিদেশের বইমেলাগুলোয় ওঁকে খুঁজতে গিয়ে বারবার পেয়েছি বৃষ্টি, অনিচ্ছুক ফায়ারপ্লেস এবং ঠাণ্ডা কফি। কেমব্রিজেও এমনকি, ওঁর ঠিকানা কেউ বলতে পারেনি। কেবল এক বাজিকর, মৃদু হেসে, ম্যাপের বদলে দিয়েছিল একখানা হাউই।
আমি তা সত্ত্বেও ভাবতাম, স্টিফেন হকিং একজন কবি। উলের গোল্লার মতো দেখতে পান পুঞ্জীভূত সময়কে, যা একদিন বুনতে বুনতেই শেষ হবে কোথাও। পোষা বেড়ালের মতোই দেখতে পান ছুটন্ত সময়কে, যার চাতুর্য রেশম দিয়ে তৈরি। আর আমাদের অসীম তুচ্ছতার কাব্যে টেনে আনেন অহেতুক সমীকরণ। নেহাত নতুন খাতা কেনা হয়নি বলে, শীতল সমুদ্রের ধারে কাটিয়ে আসেন ছুটি।
আমি এইসবের পরেও ভাবতাম, স্টিফেন হকিং একজন কবি। কল্পনাশক্তি মাধ্যাকর্ষণ মানে না, যেমন প্রেম মানে না ক্ষমতাকে। আর স্নান শেষে, তাঁর মাথা মুছিয়ে দেওয়া তোয়ালের গায়ে ফুটে ওঠে একে একে তারাদের নাম। আমি অনেকদিন পর্যন্ত ভাবতাম, স্টিফেন হকিং একজন কবি। পরে, অনেক পরে আমি বুঝতে পেরেছি, তিনি সত্যিই একজন কবি। হে উড়ন্ত হুইলচেয়ার, হে প্রাজ্ঞ আকাশ সমাধি, লেখা পাঠাও…’