সৈয়দ শামসুল হকের লেখা সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য নিয়ে তৃতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন ‘রাণী কুঠির বাকী ইতিহাস’ খ্যাত নির্মাতা সামিয়া জামান। চলতি বছরেই চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ শুরু করবেন তিনি। পাশাপাশি চলবে অনুদানপ্রাপ্ত শবনম ফেরদৌসীর পরিচালনায় ‘আজব সুন্দর’ এর কাজ।
সৈয়দ শামসুল হকের চিত্রনাট্য নিয়ে সামিয়া জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, আমি মূলত অনুদানের ছবিটি প্রযোজনা নিয়েই ব্যস্ত। তবে এ বছরই শুরু করব আমার তৃতীয় চলচ্চিত্রের কাজ। আমাদের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের নিজের হাতে কম্পোজ করা পূর্ণাঙ্গ চিত্রনাট্য আমার কাছে রয়েছে। যা তিনি নিজে দিয়েছিলেন। যদিও এর নাম ঠিক হয়নি। সেটি নির্মাণ করব। মার্চের মধ্যে পুরো বিষয় চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেব আশা করছি।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন সৈয়দ শামসুল হক। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ৩০টিরও অধিক সিনেমার কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন সৈয়দ হক। ১৯৫৬ সালে প্রথম ‘মাটির পাহাড়’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য ও গীত রচনা করেন। এরপর ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’, ১৯৬৪ সালে ‘শীত বিকেল’, ১৯৬৬ সালে ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনী চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেন। ১৯৬৬ সালে নিজের কাহিনী চিত্রনাট্য ও সংলাপে প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন উর্দু সিনেমা ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’। এরপর ১৯৬৭ সালে ‘নয়ন তারা’, ১৯৬৯ সালে ‘ময়নামতি’, ‘কাচ কাটা হীরে’ ও ‘মধুমিলন’, ১৯৭০ সালে ‘বিনিময়’ ও ‘কখগঘঙ ’চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ রচনা করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে ‘অবুঝ মন’, ১৯৭৬ সালে ‘মাটির মায়া’, ১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিল’ চলচ্চিত্রের কাহিনী চিত্রনাট্য সংলাপ ও গীত রচনা করেন। এই চলচ্চিত্রটি চিত্রনাট্যের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৮৩ সালে ‘পুরস্কার’ চলচ্চিত্রের কাহিনী চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য ও সংলাপে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন সৈয়দ হক।
১৯৮৪ সালে ‘অভিযান’, ২০০৮ সালে ‘একজন সঙ্গে ছিল’ এবং সর্বশেষ নিজের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য করেন তিনি। ‘গেরিলা’ নামে সেই চিত্রনাট্যটি পরিচালনা করেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।
অন্যদিকে সর্বশেষ ২০১৪ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর প্রযোজনায় সরকারী অনুদানে সামিয়া জামান নির্মিত ‘আকাশ কত দূরে’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। জুলফিকার রাসেল এর কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গীত রচনায় চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন তিনি। এতে গত বছর প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনয় করেন।
এদিকে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধশিশুদের নিয়ে প্রামান্যচিত্র ‘জন্মসাথী’ নির্মাতা শবনম ফেরদৌসীর ২০১৬-১৭ বছরের সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘আজব সুন্দর’ প্রযোজনা করছেন সামিয়া জামান।
১৯৮৭ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ খ্যাত নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের ‘সূচনা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সামিয়া জামান। ২০০৬ সালে ‘রাণী কুঠির বাকী ইতিহাস’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে একক নির্মাতা হিসাবে আবির্ভুত হন। এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফেরদৌস ও পপি।
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে একটি সেমিনার পরিচালনা করা সামিয়া জামান ২০১৫ সালে বিচারক হিসাবে কাজ করেন জেনেভা আন্তর্জাতিক ওরিয়েন্টাল চলচ্চিত্র উৎসবে।