সম্প্রতি গানের ও অভিনয়ের কারণে দীর্ঘ সংসার জীবনের ইতি টেনেছেন দুই তারকা। বিচ্ছেদের পর তারা জানিয়েছেন, পেশাগত জীবনে স্বামীদের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ, স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে না দেয়া আর অকারণ সন্দেহ করাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও সংসার সামলেই নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন, সেই সুযোগ না পাওয়াতেই স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
অতীতেও দেশের অনেক সেলিব্রেটি তারকাদের সংসারও এভাবেই ভেঙ্গে গেছে। সংসার এবং ক্যারিয়ার সমান তালে না চলার কারণ জানতে চ্যানেল আই অনলাইন কথা বলেছে অভিনয় জগতের দুজন সেলিব্রেটি আর একজন মনোবিদের সঙ্গে। তারা বলছেন, সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ঘাটতিই মূলত এর প্রধান কারণ।
লায়লা হাসান: ক্যারিয়ারের জন্য পরিবার থেকে বের হয়ে আসার কারণ হলো সহজে কোনো কিছু মেনে না নেওয়া, ধৈর্য কম থাকা, কাজের প্রতি সৎ না থাকা। তবে যেটি সবচেয়ে বেশি দরকার সেটি হলো একটি সংসারকে টিকিয়ে রাখার জন্য দু’জনের সমঝোতা। পরস্পরের মধ্যে যদি সমঝোতা না থাকে তাহলে কোনো সম্পর্ক বেশিদিন টিকে থাকে না। আর বর্তমান প্রজন্মের মধ্যেই এটিই সবচেয়ে অভাব। সংসার জীবনে ঢোকার পর প্রত্যেক সেলিব্রেটিকে সংসারকে গ্রহণ করতে হবে তাহলে সংসারও তাকে গ্রহণ করবে।
স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে মঞ্চ, অভিনয়, নৃত্য নিয়ে তিন প্রজন্ম ধরে মিডিয়া অঙ্গণ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন লায়লা হাসান। তিনি বলেন, বিয়ের পর পরিবার থেকে সাপোর্ট না পেলে মিডিয়াতে কাজ করা যায় না। আমার যখন বিয়ে হয় হাসান সবসময় অামাকে সাপোর্ট দিতেন ও আমার কাজকে সম্মান করতেন। যারা মিডিয়া অঙ্গণের কাউকে বিয়ে করবেন তাদেরকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এবং পরিবারের কাছে তাকে কখনো হেয় করা যাবে না। কারণ তাকে হেয় করলে পরিবার তার গুরুত্ব কখনোই বুঝতে পারবে না। এছাড়া বিয়ের টিকিয়ে রাখার জন্য একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অবশ্যই থাকতে হবে।
হৃদি হক: যারা ছোট পর্দা ও বড় পর্দায় কাজ করেন তাদের ক্যারিয়ার ও পরিবার নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সেক্ষেত্রে মিডিয়া অঙ্গণের প্রত্যেক মানুষকে সংসার জীবনে ধৈর্য ও সহনশীল হতে হবে। পরিবারের সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ারে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করাতে হবে।
তাদের প্রপারটা বোঝাতে হবে। পাশাপাশি ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। যেটা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে দেখা যায় না। তারা নিজেরাও বোঝে না, তাদের কোন কাজটি করা উচিত কোনটি উচিত না। সেকারণে বিচ্ছেদের মতো ঘটনা বেশি ঘটেছে। এ কারণে কাজের প্রতি সৎ থেকে পরিবারের সবাইকে ভালোবেসে করাটা সবচেয়ে ভালো। না হলে জীবনে ঝড় আসবেই।
কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের এ সহযোগী অধ্যাপকের মতে, প্রথমে আমাদের জানতে হবে বিচ্ছেদটি কোন পক্ষ থেকে হচ্ছে যদি নারীর ক্ষেত্রে হয় তাহলে সমাজের কাছে নেগিটিভ আর পুরুষের ক্ষেত্রে তা পজেটিভ।
একজন নারী যখন তার কাছের মানুষের দিক থেকে প্রাপ্ত সম্মানটুকু না পায় এবং তার চলাফেরার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়, তার সব কাজে বাধা দেয়া হয়; তখনই নারীরা সংসার থেকে বের হয়ে আসেন। কিন্তু সংসার জীবন থেকে বের হয়ে আসা পরও সমাজ থেকে তারা যোগ্য মূলায়ন পান না।
তিনি জানান, পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা সংসার সামলে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাইলেও পারিবারিকভাবে তাদেরকে চাপ দেয়া হয়, নির্যাতনের মতো পথও বেছে নেন অনেকে। আর সেকারণে মূল্যবোধ অনেকটা কমে যায় সম্পর্কের মধ্যে। তাই অহরহই হয় সংসার বিচ্ছেদ।
অবশ্য এমন বিচ্ছেদ থেকে বাঁচায় মুক্তির উপায় সম্পর্কে এ মনোবিদ বললেন, সবার প্রতি সবার মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। একে অন্যকে সম্মান করতে হবে। এরপরও যদি পরিবারের কোনো ঝামেলা হয়, তাহলে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে সম্পর্ক সহজ করতে হবে। এছাড়াও কোনো মনোবিদদের পরামর্শ নিয়ে সমাধান নেওয়া যেতে পারে।