জন্মান্ধ চোখে দেখতে না পেলেও স্বপ্ন তো দেখতে পারে। আমার বিষয়টা ছিল তেমন- ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭’ পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে একথাগুলোই বলছিলেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক নরেশ ভুঁইয়া।
৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বিনোদন সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত থাকলেও নাকি কখনও কোনো পুরস্কার হাতে পাননি সাংবাদিক নরেশ ভুঁইয়া। কিন্তু আশা ছাড়েননি মোটেও। তাই এই পুরস্কার প্রাপ্তি তার কাছে এক বিরাট পাওয়া।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘যেদিন আমি শুনেছি এই পুরস্কার আমি পেতে যাচ্ছি সেদিন না পাওয়ার বেদনা এবং পাওয়ার আনন্দ মিলে এক মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়েছিল আমার মাঝে।’
নরেশ ভুঁইয়া যার স্বপ্ন ছিল একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হবেন। আর সে আশাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকায়। ১৯৬৯ সালে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ নীতি বিভাগে। কিন্তু ছবি বানানোর নেশা তার পিছু ছাড়েনি। তাইতো ১৯৭২ সালে সংশ্লিষ্ট হন সেই সময়ের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’ পত্রিকায়। একটানা ৩৩ বছর কাজ করেন সেখানে। নাটক, টেলিছবি নির্মাণ, থিয়েটার সবক্ষেত্রে কাজ করলেও আজও সিনেমা বানানোর স্বপ্ন তার স্বপ্নই রয়ে গেছে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়তে রাজি নন। পুরস্কার প্রাপ্তির মতো এই স্বপ্নও তার একদিন পূরণ হবে বলে তিনি আশা রাখেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলের বলরুমে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭’আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও একজন চলচ্চিত্র সাংবাদিক এবং সেরা চলচ্চিত্রের পরিচালককে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। নরেশ ভুঁইয়া চলচ্চিত্র সাংবাদিক হিসেবে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭’ লাভ করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে এবছর পুরস্কৃত হন আব্দুল লতিফ বাচ্চু।
এবারের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবীন অভিনেতা হাসান ইমাম। ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭ তে পুরস্কার প্রাপ্তদের উত্তরীয় পড়ে দেন মামুনুর রশীদ, ক্রেস্ট প্রদান করেন হাসান ইমাম, অর্থসূচক মূল্য প্রদান করেন কেকা ফেরদৌসী এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মুকিত মজুমদার বাবু।
প্রসঙ্গত ১৯৩০ সালে সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফজলুল হক। পঞ্চাশের দশকে যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যাত্রা শুরু করেনি চলচ্চিত্রশিল্প, সে সময় বগুড়ার মতো মফস্বল শহর থেকে ‘সিনেমা’ নামে চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। পত্রিকাটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাবিষয়ক সাময়িকী। সারা দেশেই এটি আলোড়ন তুলেছিল। তৎকালীন সময়ের অত্যন্ত মানসম্পন্ন এবং জনপ্রিয় পত্রিকা সিনেমা। এ সূত্রে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ফজলুল হক।
এছাড়া ষাটের দশকে ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে দেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্রটিও নির্মাণ করেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে শিশুনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন আজকের স্বনামধন্য টিভি ব্যক্তিত্ব ফজলুল হকের সন্তান ফরিদুর রেজা সাগর।
১৯৯০ সালের ২৬ অক্টোবর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই গুণী মানুষটি। এরপর ২০০৪ সাল থেকে ফজলুল হক স্মৃতি কমিটির পক্ষ থেকে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। ফজলুল হক স্মৃতি কমিটির পক্ষে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ প্রর্বতন করেন ফজলুল হকের সহধর্মিনী কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের শুরুতে তাকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘সম্মুখযাত্রী ফজলুল হক’ প্রদর্শন করা হয় এবং মধ্যাহ্নভোজের মাঝে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মৌসুমী বড়ুয়া।
ছবি: জাকির সবুজ