কখনো ভয়ঙ্কর খুনী। কখনো প্রতাপশালী নেতা। আবার কখনো ছিঁচকে চোর। কখনো বা আবার সাংবাদিক! এরকম বহু বিচিত্র চরিত্রে এরইমধ্যে অভিনয় করে বলিউডে সাড়া ফেলেছেন যিনি, তিনি নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। তুখোড় এই অভিনেতাকে এবার দেখা যাবে উর্দু ভাষার জনপ্রিয় একজন লেখকের চরিত্রে!
উর্দু ভাষার বরেণ্য লেখক সাদত হোসেন মান্টো। তার জীবনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন অভিনেত্রী ও নির্মাতা নন্দিতা দাশ। আর এই ছবিতেই সাদত হোসেন মান্টোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন নওয়াজউদ্দিন। ছবির ট্রেলার রিলিজের পর চারদিকে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবিটি নিয়ে। আসছে ২১ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা। এই চলচ্চিত্রটিকে প্রসঙ্গ ধরে সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ প্রকাশ করেছে নওয়াজউদ্দিনের একটি সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এ,কামেশ্বরী। সচরাচর সাক্ষাৎকার না দিলেও ছোট্ট এই সাক্ষাৎকারে ‘মান্টো’ ছাড়াও কথাবার্তায় উঠে আসে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া নওয়াজ অভিনীত জিনিয়াস ও সেক্রেড গেইম প্রসঙ্গ। সাক্ষাৎকারটি চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করেছেন জুয়েইরিযাহ মউ:
জিনিয়াস-এর চরিত্র কতোটা অন্যরকম ছিল অন্যান্য নেতিবাচক চরিত্রের চেয়ে? অথবা গ্রে সেইডসের যেসমস্ত চরিত্রে আপনি অভিনয় করেছেন এর আগে?
আমি মান্টো, বাল ঠাকরে এবং প্রেমের কাহিনিতেও অভিনয় করেছি। তাই ব্যাপারটা এমন না যে আমি শুধু নেতিবাচক চরিত্রের অভিনয়েই ভালো। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। ‘নেগেটিভ ক্যারেক্টার’ টার্মটি চালু হয়েছে ষাট-সত্তরের দশক থেকে এবং এই নব্বইয়ের দশকেও চলছে। পরিবর্তনটা ৯০ এর দশক থেকে শুরু হয়েছে। এখন নেতিবাচক চরিত্রগুলোতেও যে ভালো দিক আছে তা দেখানো হচ্ছে। এখন এমনকি প্রধান চরিত্রের মধ্যেও ‘গ্রে সেডস’ কিংবা নেতিবাচক দিক থাকে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, চলচ্চিত্রতে ‘হিরো’ই হল গতানুগতিক একটি চরিত্র। ইদানিং বেশিরভাগ চরিত্রই মানুষ ঠিক বাস্তবে যেরকম সেরকমের কাছাকাছিই। আমাদের কোন অমরেশ পুরি বা জিভান নেই। সে সময় চলে গেছে। আমাদের এসমস্ত ‘ভিলেন’ বা ‘নেগেটিভ রোল’-এর পৃথকীকরণ থেকে বের হয়ে আসা উচিৎ। বাস্তব জীবনের মানুষগুলোই ভেসে বেড়াচ্ছে।
‘জিনিয়াস’-এ একজন ইঞ্জিনিয়ারের চরিত্র করেছি আমি। এ চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজের অন্য একটি দিক আবিষ্কার করতে পেরেছি আমি। একারণে যখন এই চরিত্রকে নেগেটিভ ক্যারেক্টার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তখন আমার কষ্ট হয়, কারণ এই চরিত্রকে আমি নিজের মধ্যে, নিজের আত্মার ভেতর ধারণ করেছি আবিষ্কারের জন্য। এটা আমার কাছে একজন মানুষ।
ভারতে কিংবা ভারতের বাইরেও আপনার চলচ্চিত্র সবসময় প্রশংসা পেয়ে থাকে। কিন্তু আপনি সম্প্রতি বলেছেন সত্যিকারের প্রশংসা পেয়েছেন নেটফ্লিক্সের ‘সেক্রেড গেমস’-এর মধ্য দিয়ে। প্রত্যাশা করেছিলেন এটা?
এটা বেশ ভালো যে এতো বিশৃঙ্খলার মধ্যেও ‘সেক্রেড গেমস’ বিখ্যাত হল বা দর্শকখ্যাতি পেল। আমি প্রত্যাশা করিনি এর মাধ্যমে এতো ভালোবাসা আমি পাবো। আমি যখন কাজ করেছি তখন চরিত্রটি আবিষ্কার করা, তার পারিপার্শ্বিকতা বোঝাই আমার লক্ষ্য ছিল আর এটাই সবচে আগ্রহোদ্দীপক দিক ছিল আমার জন্য।
কোনটা বেশি কঠিন – ‘মান্টো’র মানসিকতা ধরতে পারা নাকি চলচ্চিত্রের কাজ শেষ হওয়ার পর সেই চরিত্র থেকে বের হওয়া?
যতোটা পারা যায় ততটা সৎ থাকাই ছিল সবচে বড় চ্যালেঞ্জ। গল্পটা সাম্প্রতিক সময়েরই গল্প।
মান্টো বাকস্বাধীনতা আর মুক্তচিন্তার কথাও বলেন। বাকস্বাধীনতা কি আদতেও কঠিন হয়ে পড়ছে ফিল্মের ভেতরে কিংবা বাইরে?
আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব কম সময়ই কথা বলি আমার ভাবনা-চিন্তা নিয়ে। আমি যখনই বলেছি এক দু’বার, আমাকে নিয়ে ট্রল করা হয়েছে বা শালীন আচরণ করা হয়নি। তাই আমি চিন্তাহীন হওয়ার পথটিই বেছে নিয়েছি এবং কোন কিছু নিয়েই কথা বলতে চাই না আসলে।
কথা বলতে কি ভয় পান আপনি?
ভয় পাই না, আমি কাজ করছি। এবং আমার মনে হয় চরিত্রের মধ্য দিয়েই আমি আমার ভাবনা প্রকাশ করি। ‘মান্টো’র মধ্য দিয়ে আমি অনেককিছু বলার চেষ্টা করেছি। যা অন্যভাবে আমি কিছুতেই বলতে পারতাম না। আমার চরিত্রই আমার অভিব্যক্তি।
এছাড়াও সোস্যাল মিডিয়া ঘৃণা ছড়ানোর একটা প্লাটফর্মও হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখুন, মুভি রিলিজ হল আর যেকোন একজন আমার ওয়ালে এসে লিখলো ‘আমি তোমার ফিল্মকে পাঁচে দুই দিবো!’ আমার প্রশ্ন হল, তুমি কে আমার চলচ্চিত্রকে জাজ করার?