বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে কেন্দ্র করে ‘স্বপ্নবাজি’ সিনেমায় লগ্নি করছেন পিয়াল হোসাইন। ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি বাজেটে সিনেমাটি প্রযোজনা করতে গিয়ে আমেরিকায় নিজের বাড়ি বিক্রি করলেন নবীন এ প্রযোজক!
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কের বাফেলোতে অবস্থিত বাড়িটি বিক্রি করেছি ‘স্বপ্নবাজি’-তে লগ্নির জন্য।
প্রায় ২০ বছর ধরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত পিয়াল হোসাইন। টুকটাক মডেলিং করেছেন। বর্তমানে তিনি ফ্যাশন ডিজাইনার। লম্বা সময়ে ফ্যাশন ও মডেলিং নিয়ে তার অভিজ্ঞতা কম নয়। এ জগতের উত্থান পতনও দেখেছেন।
তিনি লক্ষ্য করেছেন, এ গ্ল্যামার্স ওয়ার্ল্ডে প্রতিনিয়ত শতশত তরুণ-তরুণী তারকা হতে আসেন। সাফল্য পেতে অনেক কাঠখড় পোড়ান। সাফল্য পান হাতে গোনা ক’জন। বেশিরভাগই ঝরে পড়েন। এসব মডেলদের ফ্যাশন জগতের পথচলা, পরিশ্রম নিয়েই পি এইচ এন্টারটেনমেন্টের প্রথম প্রযোজিত সিনেমা ‘স্বপ্নবাজি’।
পরিচালনা করছেন রায়হান রাফী। সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন মাহিয়া মাহি, সিয়াম আহমেদ, জান্নাতুল পিয়া, গোলাম কিবরিয়া তানভীর, উর্বী, সুমন আনোয়ার প্রমুখ।
পিয়াল হোসাইন বলেন, অর্থকড়ির চেয়ে সবসময় প্যাশনকে গুরুত্ব দেই। সিনেমাটা আমার ভিতরে ধারণ করি। সফল হই বা লোকসান করি যাই হোক কাজটাকে আমি একটু বেশি এনজয় করছি। সিনেমা কোটি টাকা বিনিয়োগ করা এখন অনিশ্চিয়তা, একটা লটারির মতো। টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা কম। সেজন্য যেমন কাজ করলে নিশ্চয়তা আসবে তাই করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে বাফেলোতে একটি বাড়ি ছিল। সেটা বিক্রি করে ওই টাকায় স্বপ্নবাজি বানাচ্ছি। শুরুর পর থেকে সবাই প্রশংসা করছে। কোয়াটিলি সম্পন্ন হবে বুঝেই সেলেব্রেটি প্রোডাকশন যুক্ত হয়েছে। শুরুতে পরিকল্পনা করেছিলাম ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো বাজেট থাকবে ‘স্বপ্নবাজি’র। কিন্তু সেলেব্রেটি প্রোডাকশন যুক্ত হওয়ার পর বাজেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো। পি এইচ এন্টারটেনমেন্ট ও সেলেব্রেটি প্রোডাকশন এখন ‘স্বপ্নবাজি’র ফিফটি-ফিফটি পার্টনার।
হুট করেই সিনেমায় বিনোয়োগ করেননি পিয়াল হোসাইন। নির্মাণের আগে প্রায় একবছর ধরে বাফেলোতে সিনেমা বিষয়ক একটি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। শুধু সিনেমা নির্মাণ নয়, ওই কোর্সের মধ্যে সিনেমা আগাগোড়া সবকিছু নিয়েই লেখাপড়া করেছেন তিনি। পিয়াল বলেন, একটি সিনেমা নির্মাণের সঠিক পদ্ধতি থেকে টোটাল আয়োজন, মার্কেটিং সবকিছুই জেনেছি।
২০১৯ সালের শুরুতে ‘স্বপ্নাবাজি’র ঘোষণা দিয়েছিলেন পিয়াল। কিন্তু শুটিং শুরু করেছেন গত ফেব্রুয়ারিতে। পিয়াল বলেন, ঘোষণা দেওয়ার পর অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে সিনেমা কেন শুরু করি না। অনেকেই ফাঁকা আওয়াজ ভেবেছিল! কিন্তু টাকা থাকলেই কি সিনেমা হয়? টাকা থাকলেই যে সিনেমা হয় এটা সম্পূর্ণ ভুল। টাকার পাশাপাশি সঠিক পরিকল্পনা লাগে। আমার পরিকল্পনা ঠিক ছিল বিধায় পরে অন্য প্রোডাকশন হাউজ যুক্ত হয়েছে। পরিকল্পনা ঠিক হলে মার্কেটই টাকার যোগান দেবে।
তিনি বলেন, ‘স্বপ্নবাজি’ সিনেমা নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। শুধু আমি নই, এর সঙ্গে জড়িত প্রতিটি শিল্পী, টেকনিশিয়ান আশাবাদী। গতমাসে ১০ দিন শুটিং করেছি। মাহির কিছু অংশের শুটিং হয়েছে। অন্যদেরও কাজ হয়েছে। প্রত্যেকেই সেরা সাপোর্ট দিচ্ছে। তবে বাকি আছে সিয়ামের অংশের শুটিং। সবমিলিয়ে আরও ২০ দিনের মতো লাগবে। এপ্রিলের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ করবো।
পিয়াল হোসেন বলেন, আমার ঋণ খেলাপি নেই, কালো টাকাও নেই যে সিনেমা বানিয়ে সাদা করবো। সিনেমা বানাচ্ছি আমার বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে। এরচেয়ে সলিট টাকা আর হতে পারেনা। গত ১০ বছর ধরে আমেরিকার জ্যামাইকাতে ভাসাবি ফ্যাশন হাউজ, অফিস ছিল। সেখানে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছি। বিদেশে যতই ভালো অবস্থায় থাকি না কেন সেখানে রোহিঙ্গার মতো লাগে! তাই এখন থেকে দেশেই ব্যবসা করবো। দেশই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে নেওয়া সব সিদ্ধান্ত ঠিক হয়না, আবার সব সিদ্ধান্ত ভুলও হয় না।