৩২ বছর বয়সেও আটকে রাখা যাচ্ছে না লিওনেল মেসিকে। মৌসুমে আরও অন্তত দশ ম্যাচ হাতে রেখে করে ফেলেছেন ৪২ গোল। বাড়াচ্ছেন প্রত্যাশা। দেখে মনে হচ্ছে যেন ১০ বছর আগের সেই তরুণ! আর নিজেদের সেরা খেলোয়াড়টির এমন আগুনে ফর্ম দেখে মুগ্ধতা কমছেই না বার্সেলোনা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউয়ের। ইএসপিএনকে জানিয়েছেন, সারাজীবনের জন্য রেখে দিতে চান ক্লাব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে!
সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সাল পর্যন্ত মেসির জাদু দেখতে পাবেন ন্যু ক্যাম্পের দর্শকরা। কারণ সেই সময় পর্যন্তই বার্সার সঙ্গে চুক্তি আছে বর্তমান অধিনায়কের। কিন্তু তারপর কী হবে? মেসি যদি নতুন করে চুক্তি না করেন?
শুধু মেসির আগ্রহ থাকলেই কিন্তু হবে না। ২০২১ সালে যখন বর্তমান চুক্তি শেষ হবে, তখন মেসির বয়স হবে ৩৪। ক্যারিয়ার থাকবে শেষের পথে। ফুটবলের বিচারে ‘বুড়ো’ একজন ফুটবলারের জন্য আবার কাঠখড় কেন পোড়াবে বার্সার মতো ক্লাব?
৩৪ হোক আর যাই হোক, মেসিকে মোটেও বুড়ো ভাবতে রাজী নন বার্তেমেউ। বার্সা সভাপতির চোখে আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর হলেন চিরতরুণ! তার চেয়ে বড় কথা বার্সা হল মেসির ঘর। ২০০৪ সালে যে দলের হয়ে অভিষেক সেই দল ছেড়ে কোথায় যাবেন মেসি!
‘আমরা চাই মেসি যেন নিজের ক্যারিয়ার লম্বা করে ফুটবলটা নিজের মতো করে উপভোগ করে। সে প্রত্যাশার সীমানা ভেঙে দিয়েছে। সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। এমনকি প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের চোখেও সে শ্রদ্ধার পাত্র।’
‘আসল কথাটা হল, আমরা তার সঙ্গে চুক্তিটা নবায়ন করতে চাই। সে এখনো তরুণ, এটা তার পারফরম্যান্স দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমাদের সঙ্গে এখনো তার দুই বছরের চুক্তি বাকি আছে। দিন দিন তার উন্নতি হচ্ছেই, নিত্য নতুন কিছু আবিষ্কার করছে। আমি বিশ্বাস করি তার সামনে এখনো লম্বা একটা সময় পড়ে আছে। বার্সেলোনাতে তাকে ধরে রাখতে আমরা সামনের মাসে বসতে চাই।’
বার্সার যুব একাডেমি লা মাসিয়ায় খেলে ২০০৪ সালে মূল দলে অভিষেক মেসির। ১৫ বছরে ৫৯৪ গোল করে হয়েছেন ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা। জিতেছেন ৯টি লা লিগা শিরোপা, হয়েছেন চারবার ইউরোপ সেরা। এই ক্লাবের জার্সি গায়ে পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জয়ের কীর্তি আছে এলএম টেনের।
সাবেক সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে পেছনে ফেলে বার্সার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৭৬ ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়টি হলেন মেসি। ৭৬৭ ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত এগিয়ে তার আরেক সাবেক সতীর্থ জাভি।
কিন্তু একদিন না একদিন বুটজোড়া তুলে রাখতেই হবে মেসিকে। বার্তেমেউয়ের স্বপ্ন বার্সার জার্সি গায়ে, তার সমর্থকদের সামনে যেন সেই বিদায়টা নেন অধিনায়ক।
‘মেসি বার্সার ভাবনাটাই পরিবর্তন করে দিয়েছে। সে আমাদের দেখিয়েছে প্রতি মৌসুমে ক্লাবকে সবসময় শীর্ষে রাখা, সবগুলো শিরোপা জেতা এবং প্রতি মৌসুমে জেতার দৌড়ে রাখার রাস্তা। মেসি জানে তার শরীর এ পর্যন্ত ভালো। কিন্তু একদিন তারও মনে হবে যে, নাহ আর পারছি না। সে আমাদের ছেড়ে যাবে। আমরাও ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হবো। লিও আমাদের নেতা, বিশ্বের সেরা ফুটবলার। সে আমাদের হয়ে খেলছে, অবিশ্বাস্য খেলছে। কিন্তু আমরাও জানি, এটি সারাজীবন স্থায়ী হবে না।’
‘মেসি হল ক্লাবের ঘরের ছেলে। মাঠে সে যা করে এ তারচেয়েও বেশি কিছু। বার্সার সঙ্গে তার সম্পর্ক চিরদিন অটুট থাকবে। উদাহরণ হিসেবে পেলের কথা বলতে পারেন। তিনি সান্তোসের পেলে হয়ে থেকেছেন সারাজীবন। আমরা চাই মেসি বার্সার মেসি থাকুক। সেটা খেলোয়াড় হয়েও কিংবা অন্যভাবেও।’
‘খুব বেশি হলে তিন কী চার বছর, এরপরই হয়তো লিও বলবে যে, এবার ফুটবলকে বিদায় বলে দেবো। আমাদের সে সময়টার জন্য তৈরি হতে হবে। মেসিকে ছাড়া খেলার প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ আমরা সারাজীবন শীর্ষে থাকতে চাই।’