মন্ত্রী হওয়ার পর সাংবাদিকবিরোধী ইমেজ পাওয়া সৈয়দ মহসিন আলীর কাছের বন্ধুদের অনেকেই ছিলেন খ্যাতনামা সাংবাদিক। এমনই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু সংবাদ সংস্থা এপি’র সাবেক ব্যুরো চিফ এবং ইনফোকাস’র প্রধান নির্বাহী ফরিদ হোসেন স্মৃতিচারণে তুলে ধরলেন মহসিন আলীর ব্যক্তিরূপ।
ব্যক্তি মহসিন আলীকে তিনি এক কথায় বর্ণনা করলেন বন্ধুবৎসল মানুষ হিসেবে। তিনি বলেন, মহসিন আলী ছিলেন খুবই অতিথিপরায়ণ একজন মানুষ। ‘বিশাল হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। তার সঙ্গে যারা ব্যক্তিগতভাবে মিশেছেন তারা জানেন উনি কতটা বন্ধুত্বপরায়ণ ছিলেন।’
‘মহসিন আলীর মৌলভিবাজারের বাড়িতে আমরা যদি কোনো দরকারে আগে থেকে না জানিয়ে রাত দু’টোর সময়ও গিয়ে উঠতাম, তার আয়োজন দেখে মনে হতো যেনো আগে থেকে জানিয়ে দেখা করতে গিয়েছি। দুপুরে খাওয়ার আগে কোনো বাসায় গেলে যেমন আয়োজন পাওয়া যায়, রাত দু’টোতেও তেমন ব্যবস্থা করতেন তিনি।’
শুধু যে বন্ধু বা পরিচিতদের প্রতিই সৈয়দ মহসিন আলী এরকম অতিথিপরায়ণ ছিলেন, তা নয়। ‘আমরা যদি সঙ্গে নিজেদের আরো সাত-আটজন নিয়ে হাজির হতাম, তবুও ততোটাই আপ্যায়ন করতেন তিনি। তাও হাসিমুখে। অতিথি আপ্যায়নের সময় তার মুখে হাসি ছাড়া কখনো এক বিন্দু ক্লান্তিও দেখা যেতো না। খুবই আমুদে প্রকৃতিরও ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী।’
গণমাধ্যমে সম্প্রতি উঠে আসা সৈয়দ মহসিন আলীর বিভিন্ন আচরণ, শব্দপ্রয়োগ বিষয়ে ফরিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা, যারা মহসিন আলীর বন্ধু ছিলাম, তাকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনি, তারা এসব ব্যাপারে বেশ অবাক হয়েছি। মৌলভিবাজারের সাংবাদিকরা এখনো তার সম্পর্কে ভালো কথাই বলেন।’
গণমাধ্যম কিছু কিছু ব্যাপারে মহসিন আলীকে যেভাবে চিহ্নিত করেছে, তাকে এর সম্পূর্ণ বিপরীত উল্লেখ করে ফরিদ হোসেন বলেন, এমন উদারচিত্তের মানুষ খুব কমই আছেন।
‘তিনি এতোটাই সৎ ছিলেন যে, মিডিয়াতে তাকে নিয়ে আলোচনার ঝড় চলার সময় আমি কিংবা হাসান শাহরিয়ারের মতো সাংবাদিকরা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার পরও এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা চাননি।’
সাংবাদিক বন্ধুদের দ্বারা তিনি এতোটাই প্রভাবিত ছিলেন যে, নিজের মেয়েকেও সাংবাদিকতায় পড়িয়েছেন তিনি। তাকে হারিয়ে একজন ভালো বন্ধু, বড় ভাই হারিয়েছেন বলে জানান ফরিদ হোসেন।
গান শুনতে এবং গাইতে খুব পছন্দ করতেন মহসিন আলী। সেসব কথা বলতে বলতে তিনি বিষণ্ন হয়ে পড়েন।
পুরনো স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৮ এর নির্বাচনের কিছু সময় আগে একবার মহসিন আলী খুব অসুস্থ হয়ে বারডেমের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি ছিলেন। সেসময় তিনি এবং হাসান শাহরিয়ার মহসিন আলীকে দেখতে হাসপাতালে গেলে ডাক্তার বলেন: আপনাদের সঙ্গে এটাই তার শেষ দেখা। শুনে আমরা খুব কষ্ট পেলাম। কিন্তু তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। বাসায় ফেরার পর তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আমরা ফিরে পেলাম আগের সেই আমুদে হাস্যোজ্জ্বল মহসিন আলীকে।’
আগের মতো এবারও বন্ধুকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে পাওয়ার আশা করছিলেন ফরিদ হোসেনের মতো কাছের বন্ধুরা। কিন্তু এবার আর তিনি ফিরে এলেন না পুরনো সেই পরিচিত অট্টহাসি নিয়ে। চলেই গেলেন না ফেরার দেশে।