আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে জারি করা সরকারি বিধিনিষেধের (সর্বাত্মক লকডাউন) প্রথম দিনই পাঁচ হাজার মানুষ গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে হুশিয়ারি দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমরা ‘হার্ডলাইনে’ থাকব, অকারণে ঘর থেকে বের হলে তাকে গ্রেপ্তার করে মামলা দেওয়া হবে।
আজ বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, অকারণে কেউ যদি ঘর থেকে বের হয় তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হবে। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারায় মামলা দিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হবে। আবার আদালতে না পাঠিয়ে মোবাইল কোর্ট দিয়ে তাদের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এই ধারায় সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেল, অর্থদণ্ড ও উভয়দণ্ড হতে পারে বলে জানান কমিশনার।
বুধবার দুপুরে করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, কেউ অকারণে বের হলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো, প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ব্যবস্থা নেবো। অকারণে বের হলেই আইনি ঝামেলায় পড়তে হবে। যানবাহন ব্যবহার করলে মোটরযান আইনে ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারা অনুযায়ী কেউ বাইরে বের হলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো, তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হবে। যেটি আমরা এর আগে কখনও করিনি। এবারে আমরা এই অবস্থান পর্যন্ত যাব। আপনারা এমনও শুনতে পারেন ডিএমপি প্রথম দিন ৫ হাজার লোককে গ্রেফতার করেছে। এবার আমরা অত্যন্ত শক্ত অবস্থায় থাকবো।
নাগরিকদের উদ্দেশে কমিশনার বলেন: পুলিশ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যতটা কঠোর হবে, আপনার পরিবার-সন্তান ততটাই নিরাপদে থাকবে। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন, পুলিশের সাথে তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে আমাদের ফাঁকি দিতে পারবেন, পুলিশের কাজের ভিডিও করে ভাইরাল করে পুলিশকে সমালোচনার মুখে ফেলতে পারবেন তবে সন্তান ও পরিবারকে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে পারবেন না।
তিনি বলেন, সড়কে কোনো ধরনের যান্ত্রিক বাহন আমরা চলতে দেবো না। মুভমেন্ট পাস থাকছে না। কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে না। তবে সঙ্গত কারণ থাকলে বা নিত্য প্রয়োজনীয় বাজারে যেতে হলে আমরা তাদের রিকশা ব্যবহারের অনুরোধ করবো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছিল সেখানে আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে রিকশা খোলা থাকে বিধায় সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। তাই রিকশা ব্যবহার করা যাবে। তবে শুধুমাত্র জরুরি কাজে রিকশা ব্যবহার করা যাবে। কেউ যদি মনে করি বউ বাচ্চা নিয়ে পার্কে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রিকশা ব্যবহার করবে, সেটা হবে না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকায় যেসব বাজার কাঁচাবাজার রয়েছে সেগুলোকে রাস্তার পাশে নিয়ে আসা হবে, যাতে মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করতে পারেন। খাবারের হোটেলগুলো শুধুমাত্র খাবার বিক্রির জন্য খোলা থাকবে, কেউ বসে খেতে পারবে না। এছাড়াও আমরা অলিগলির কোনো দোকান খোলা রাখতে দেবো না।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের উদ্দেশে কমিশনার বলেন, যারা বিদেশ থেকে ফিরবে তাদের বহনের জন্য গাড়ি ব্যবহার করা যাবে। তবে আগত যাত্রীদের পরিবারকে আমরা অনুরোধ করবো, আপনারা গাড়ি দিয়ে বিমানবন্দরে না গেলেও চলবে। কারণ বিমানবন্দরে পার্কিংয়ে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়ি রয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের রাস্তায় পুলিশকে প্লেনের টিকিট এবং পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে।
কমিশনারের অনুরোধ, সাংবাদিকসহ অনুমোদিত যারা বাইরে বের হবেন তারা যেন মাস্ক এবং আইডি কার্ড নিয়ে বের হন।
কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ির চলাচলের বিষয়ে কমিশনার বলেন, যেহেতু কুরিয়ার সার্ভিস কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করে এবং যাত্রী পরিবহন করে না, সে ক্ষেত্রে তারা চলাচল করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) কৃষ্ণপদ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার, সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম।