ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতিতে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখনি পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এই জন্য সুশাসন, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া ও সঠিক পরিকল্পনা দরকার।
এছাড়াও সমুদ্র অর্থনীতিনির্ভর দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বুধবার রাজধানীতে ‘সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে সুদৃঢ়করণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। ঢাকাস্থ ফ্রান্স দূতাবাস এবং বাংলাদেশ সরকারের ব্লু ইকোনমি সেল যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন, ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি আবার্ট, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকসুদুল আহসান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী ও ব্লু ইকোনমি সেলের অতিরিক্ত সচিব গোলাম শফিউদ্দিন প্রমুখ।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সমুদ্র-অর্থনীতির দিকে ঝুঁকছে প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলংকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এখন থেকে চার-পাঁচ বছর আগে বঙ্গোপসাগরে প্রায় সোয়া লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিরাট সমুদ্র এলাকা অর্জনের পর সমুদ্রসম্পদ আহরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি আবার্ট বলেন, বিশ্বব্যাপী সমুদ্র এখন এক নতুন দিগন্ত। অর্থনীতির নতুন দ্বার। কারণ এটি অর্থনীতির সব খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশ্বের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয়ে থাকে সমুদ্র পথে। তাই সমাজের উন্নয়নের জন্য সমুদ্রের অন্বেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য, স্বাস্থ্য, জ্বালানির মত মৌলিক বিষয়সহ জলবায়ুর পরিবর্তন ইস্যুতে সমুদ্র গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ভূমিকা পালন করছে।
ভবিষ্যতের জন্য ইতোমধ্যে সামুদ্রিক বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বে অতীতে অর্থনৈতিক এবং শিল্প বিপ্লব হয়েছে। তবে এখন চলছে ডিজিটাল বিপ্লব। এজন্য সতর্কতার সঙ্গে সমুদ্র অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
ব্লু ইকোনমিতে নিজ দেশ ফ্রান্সের সফলতা তুলে ধরে সোফি আবার্ট বলেন, ‘এর মাধ্যমে ফ্রান্স বার্ষিক ২৭০ বিলিয়ন ইউরো আয় করে, যা আমাদের জিডিপির প্রায় ১৪ শতাংশ। এছাড়া এর মাধ্যমে বেড়েছে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ। বর্তমানে ফ্রান্সের ব্লু ইকোনমি খাতে প্রায় ৮ লাখ ২০ হাজার লোক জড়িত।’
বাংলাদেশকে ব্ল ইকোনমিতে সহায়তা করতে আগ্রহী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র সম্পদ বিষয়ে সঠিক ধারনা দিতে দীর্ঘদিন ধরে নৌবাহিনী, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করছে ফ্রান্স। ব্লু ইকোনমিকে কাজে লাগাতে ফ্রান্স বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তবে ব্লু ইকোনমিকে কাজে লাগাতে সবচেয়ে বেশি জরুরী সুশাসন, সঠিক পদ্ধতি, পরিকল্পনা, সমন্বয় ও শক্তিশালী সংগঠন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাজুল ইসলাম বলেন, সমুদ্র অর্থনীতির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে এখনও এখাতে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
সমুদ্রসম্পদ রক্ষা করাকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন আমরা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ রক্ষা করতে পারি।
দ্বিতীয় সেশনে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ব্লু ইকোনমি সেলের কমোডোর এ এ মামুন চৌধুরী ব্লু ইকোনমির ওপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সমুদ্র অর্থনীতিকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন তিনি।
পরে চ্যানেল আই অনলাইনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমুদ্রে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ব্লু ইকোনমির দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশও সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সমুদ্রে কি কি সম্পদ রয়েছে তা গবেষণা করার জন্য দুইটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই একটি জাহাজ কেনা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।