সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে এসে সব পদে ভোট পুনঃ গণনার আবেদন করেছে বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
শনিবার রাত সাড়ে দশটায় ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের বরাবর এই আবেদন করেন। যেখানে তিনি বলেন, ‘আমি, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। গত ৬ ও ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে সভাপতি পদের একজন প্রার্থী। আমার নিয়োজিত এজেন্ট বৃন্দ ভোট গননার সময় অনিয়মের বিষয়ে মৌখিক আপত্তি ও অভিযোগ জানায়। আজ ভোট গননাকালে আমার প্রাপ্ত অনেকগুলো ভোট আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোট হিসেবে গননা করে ফলাফল সীট প্রস্তুত করা হয়। উল্লেখ্য যে, তাতক্ষণিক আপত্তি দাখিল করলে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা আমার এজেন্টের সাথে খারাপ ব্যবহার করে এবং অভিযোগটি আমলে না নিয়ে ভোট গননা সম্পূর্ন করে। এছাড়াও ১০০ বান্ডেলের অনেক বান্ডেলে ১৩০টি পর্যন্ত ব্যালট পাওয়া যায় ও গণনা করা হয়। উপোরক্ত প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে সভাপতি এবং সম্পাদক সহ সকল পদে ভোট পুনঃ গননার আবেদন জানাচ্ছি।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যপট তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার হন সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক শুক্রবার বেলা ৩ টায় ‘দিনের আলোতে’ ভোট গণনা চাচ্ছিলেন। এবিষয় নিয়েই একপর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়। শুক্রবার ভোরে মারামারির ঘটনাও ঘটে। যেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে আক্রমণ করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেটি ‘বহিরাগতের হামলা’ হয়েছে বলে অনেকে দাবী করেন। একপর্যায়ে গণনা ছাড়াই শুক্রবার সকালে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথীকে বিজয়ী ঘোষণা করে বলেন, ‘শুধুমাত্র নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন, তাই তাকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।’
তবে গণণা ছাড়া সম্পাদক পদে এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়টি শনিবার প্রত্যাহার করে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার পূর্বেই দূঃখজনকভাবে বহিরাগত মস্তান শ্রেণী কর্তৃক আমার উপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও ইহা অর্থহীন ঘোষণা, তবুও কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে তাহা ‘ইগনোর’ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলার পর বিএনপি সমর্থিত এক আইনজীবীকে গ্রেফতার ও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। গত শুক্রবার ভোরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে আক্রমণের শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন। যেখানে এই নির্বাচনের স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়। শুক্রবার রাতেই এই মামলার আসামী বিএনপি সমর্থিত ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর নাহিদ সুলতানা যুথীর বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযান চালিয়ে কয়েজনকে আটক করে। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪ জনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, দুজন সহ-সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, দুজন সহ-সম্পাদক এবং সাত জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৭ হাজার ৮৮৩ জন। আর প্রার্থী ছিলেন ৩৩ জন।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদকের দুটি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সাতটি সদস্য পদে মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূইয়া, মাহমুদা আফরোজ, মো. বেলাল হোসেন, খালেদ মোশাররফ, মো. রায়হান রনি, সৌমিত্র সরদার ও রাশেদুল হক খোকন প্রার্থী হন।
অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন), সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস, সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও সরকার তাহমিনা বেগম, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান ও মো. আবদুল করিম প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহী, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল প্রার্থী হন।
সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হন অ্যাডভোকেট মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও অ্যাডভোকেট মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান)। সম্পাদক পদে প্রার্থী হন অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী। আর কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হন মো. সাইফুল ইসলাম।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত (২০২৩-২৪) নির্বাচনে ভাঙচুর, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা ও হট্টগোলের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ভোট বর্জন ও নতুন নির্বাচনের দাবীর মধ্যেই ১৭ মার্চ রাতে সে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। যেখানে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সব কটিতেই জয় পান আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেলের আইনজীবীরা।