দেশের প্রখ্যাত ভাস্কর, মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী চলে গেলেও তার সংগ্রাম, সাহস ও সত্যভাষণের কারণে বাঙালি নারীদের অন্তরে আজীবন তিনি বেঁচে থাকবেন বলে মনে করেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
আর নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধে তার যে অবদান তা জাতি আজীবন কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবে।
প্রিয়ভাষিণীর মৃত্যুর পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম দুই তারকা।
তারা বলেন, প্রিয়ভাষিণীর পুরো জীবনটাই ছিল সংগ্রামময়। নানা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করেই তিনি এগিয়ে গিয়েছেন, মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাই তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক না হলেও হৃদয় বিদারক। যা সত্যিই মেনে নেওয়া কঠিন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী।
গত বছরের ৮ নভেম্বর বাসার বাথরুমে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান তিনি। ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রিয়ভাষিণীকে।
পরে চিকিৎসকরা জানান, হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন তিনি। এছাড়া হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দু’বার। এই মহিয়সী নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১০ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পাওয়া ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনায়।
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত এ যোদ্ধা ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিছুদিন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও ইউএনডিপি, ইউএনআইসিইএফ, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাসসহ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন।
শেষ বয়সে এসে নানা শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। এক পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় তার শিল্পকর্ম। মূলত ঘর সাজানো এবং নিজেকে সাজানোর জন্য দামী জিনিসের পরিবর্তে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে কিভাবে সাজানো যায়- এই লক্ষ্য থেকেই তার শিল্পচর্চার শুরু।
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীই প্রথম নিম্ন আয়ের মানুষ কিভাবে অল্প খরচে সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে পারে তা দেখিয়ে দেন। ঝরা পাতা, মরা ডাল, গাছের গুড়ি দিয়েই মূলত তিনি গৃহের নানা শিল্প কর্মে তৈরি করেন।