রাজধানীর হলি আর্টিজানে নৃশংস জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাদা পোশাকে ‘শান্তি সমাবেশ’ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। শনিবার বিকেল ৫ টায় শহীদ মিনারের বেদীতে এই ‘শান্তি সমাবেশ’র আয়োজন করে।
বেদীর একদিকে হলি আর্টিজানে নৃশংসতার শিকার সেই নিষ্পাপ মুখগুলোর ছবি দেয়া কালো একটি অস্থায়ী কাঠামো। পাশেই বাঁশিতে করুণ সুর তুলছেন একজন শিল্পী।
বাঁশির সেই সুর যখন বাজছে তখন শান্তির শুভকামনা নিয়ে ধীর পায়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে আসতে শুরু করেছেন শুভ্র পোশাকে নানা অঙ্গনের পরিচিত মানুষেরা। এরপর গানে,কবিতায় শুরু হয় শোকভরা স্মরণ। নিহতদের শান্তি ও জঙ্গিবাদের অন্ধকার কাটাতে জ্বালানো হয় মোমের আলো।
দেশের এই শোকের দিনে বয়সকে বশ মানিয়ে হাজির হয়েছিলেন নাট্যাঙ্গনের বয়োজেষ্ঠজন এটিএম শামসুজ্জামান। ভারী গলায় তিনি বলেন, ‘এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার সময়, অমানবিকতাকে পরাজিত করার সময়।’
সমাবেশে অংশ নিয়ে ১ জুলাইকে ‘জঙ্গিবাদ বিরোধী দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার সমাবেশে এই প্রস্তাব দিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবটি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক,গণতান্ত্রিক, সুখি-সমৃদ্ধশালী সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমরা একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা সেই স্বপ্নে বার বার আঘাত হানছে। ১ জুলাই এই স্বপ্নে চরম আঘাত আসে। শ্রদ্ধেয় রামেন্দু মজুমদার এই দিনটিকে জঙ্গিবাদ বিরোধী দিবস পালনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই প্রস্তাব পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এই দিনটি সরকারিভাবে পালিত হলে সারাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার চর্চা অবশ্যই বিকাশ লাভ করবে বলে মনে করি।
শান্তি সমাবেশে সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। শোক এবং মানবতার গানের মাঝে কবিতায় স্মরণ করা হয় মানবতাবিরোধী ওই হামলায় নিহত ইটালির সিমোনা এবং তার গর্ভে থাকা পৃথিবীর আলো না দেখা মাইকেল অ্যাঞ্জেলোকে। এইসব দুঃখগাথার ফাঁকে ফাঁকে সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত মানুষদের বেদনাভরা কণ্ঠের বক্তব্য চলে।
বেদনার সঙ্গে ছিলো ক্ষোভ। নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কয়েকজন মানুষরূপী পিশাচের জন্য আমরা পুরো দেশ বহির্বিশ্বের কাছে রীতিমতো অভিযুক্ত হলাম। আজ দুঃখ-বেদনা আরেকটি কারণে। এই রকম একটি দিনে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশের হয়ে দাঁড়ানোর দায়টা শুধু সাংস্কৃতিক জোটের একার নয়। আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ কোথায়?
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই শুভ্র বেশে আসা মানুষদের হাতে জ্বলে ওঠে মোমের আলো। নিহতদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্তম্ভের পাদদেশে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে শেষ হয় শান্তি সমাবেশ।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে অংশ নেন কবি আসাদ চৌধুরি, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফকির আলমগীর, ত্রপা মজুমদার, বন্যা মির্জা, তানভিন সুইটসহ দেশের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা।