‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’ লিখেছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অথবা ‘ভোর হলো দোর খোল’ লিখেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাল্যশিক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো রচয়িতার নাম উল্লেখ করা। রচনা ভুল হলেও ক্ষমা পাওয়া যেত কিন্তু রচয়িতা নাম ভুল তো দূরের কথা নামের বানান ভুল হলে শুধু খাতায় শূন্য দিয়ে শিক্ষকরা ক্ষান্ত হতেন না, পিটুনি অবধারিত ছিলো ললাটে। স্কুলে আবৃত্তি কিংবা গানে অবশ্যই গীতিকার সুরকার এবং মুল শিল্পীর নাম উল্লেখ করতে হতো।
মোট কথা চুরির কোন সুযোগ ছিলো না, এবং চুরি ছিলও ভীষণ লজ্জার। চুরি বলতে রান্নাঘরে দুধের সর অব্ধিই ছিলো আমাদের দৌড়। তারপর আস্তে আস্তে বয়সের সাথে বড় হতে লাগলাম আমরাও। টুকটাক এর ওর খাতা দেখে লেখা। বাড়তি টাকা গুনে (ঘুষ) বড় প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া এসব দেখে দেখেই বড় হতে লাগলাম। নিজের অজান্তেই জড়ালাম গীত রচনায়। ক্যাসেটে গীতিকার বা সুরকারের নাম উল্লেখ থাকলেও মঞ্চে অনেক শিল্পীই এ সৌজন্য দেখানোর প্রয়োজন মনে করেননি। আর এখন তো অনেকেই অনেক বিখ্যাত শিল্পীর গান মনে করেন শ্রীকান্ত আচার্যের। হা হা হা… আমারটা তোমার, তোমারটা তাহার এই সংস্কৃতির মধ্যে বড় হতে হতে হুট করে এলো ফেসবুক। রিয়েলিটি শোতে কান ধরে শ্রদ্ধেয় বিশেষণ বসিয়ে নাম উল্লেখের সংস্কৃতি তৈরি হলেও ফেসবুক মুল চরিত্র প্রকাশ করে দিয়েছে আমাদের।
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন আপনার বন্ধু তালিকায় থাকা কেউ কেউ কোন ধরনের ভদ্রতা ছাড়াই আপনার লেখাটা কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন। ( যখন আপনার এ্যাকাউন্ট থেকে কোন নাম ছাড়া পোস্ট হবে তখনও সবাই ওটা আপনারই ভাববেন তাই না !!)
কি আশ্চর্য !! কতটুকও নির্লজ্জ হয়ে পড়েছি আমরা! একবারের জন্য ভাবছিও না যে মূল রচয়িতা বিষয়টি দেখছেন। তাকে আবার লাইকও দিতে হচ্ছে। পুরো ব্যপারটাই হাস্যকর ও একই সাথে চরম লজ্জার। আপনি এতো বড় একটা পোস্ট লিখতে পারছেন অথচ ছোট্ট একটা নাম উল্লেখ করতে কার্পণ্য। হয়তো এখন আর কেউ কিছু লিখেনই না। । তাই রচয়িতার নামও উল্লেখ করতে হয় না। আমাদের চৌদ্দ পুরুষের সব শিক্ষার এখন একটাই পরিচয়। আমার নাম রাজীব আহমেদ। আমি একটি ছড়া বলবো । লিখেছেন গুগল!!!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)