কেবল বয়সের ব্যবধানই নয়, দুই দেশের দুই জনের মাঝে ছিল হাজার হাজার মাইলের ভৌগলিক দূরত্ব। তবুও সে সব কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পের মাঝে। জীবনের শেষভাগে আর্জেন্টাইন এই লেখিকা সাথে দারুণ এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কবিগুরু ভালোবেসে তার নাম দেন বিজয়া। আকাশে কান পেতে সিন্ধু পাড়ের সেই অতিথিকে উদ্দেশ্যে করে লিখেছিলেন ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী’। সেই বিদেশিনীর সাথে কবিগুরুর প্লোটোনিক বা রাবীন্দ্রিক প্রেমের ইতিবৃত্ত নিয়ে ছবি বানিয়েছেন লাতিন পরিচালক পাবলো সিজার। ‘থিংকিং অব হিম’ নামের সিনেমাটি এবার প্রদর্শিত হচ্ছে ভারতের গোয়ার ৪৮ তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। উৎসব চলবে নভেম্বরের ২০ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত।
একদিকে ধাবমান বর্তমান সময় আর অন্যদিকে অতীতের সেই স্মৃতি রোমন্থন । এর মাঝে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করে বসেন আর্জেন্টাইন এক ভূগোল শিক্ষক। চলে আসেন শান্তিনিকেতনে। মূলত এভাবেই এগিয়েছে সিজারের ছবিটির দৃশ্যপট। শুটিং হয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি জড়ানো আর্জেন্টিনার প্লেট নদীর তীরের সেই শহর স্যান ইসিদ্রোস,শান্তিনিকেতন ও সুন্দরবনের কিছু অংশ জুড়ে।
কবিগুরুর সাথে ভিক্টোরিয়ার প্রথম সাক্ষাৎ ঘটেছিল ১৯২৪ সালে। সেবার পেরু যাবার পথে হঠাৎ অসুস্থ কবিগুরু যাত্রা বিরতি নেন আর্জেন্টিনাতে। ওই সময় সেখানে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ওকাম্পোর বাড়িতে কবি প্রায় দুই মাস থেকেছিলেন। দ্বিতীয়বার তাদের দেখা হয়েছিল ১৯৩০ সালে শিল্প আর সাহিত্যের নগর প্যারিসে। সে সময় প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের একক চিত্রকলার প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন ভিক্টোরিয়া। কবির সান্নিধ্য পেয়ে উচ্ছ্বসিত ওকাম্পো এক চিঠিতে লিখেছিলেন- আপনার সান্নিধ্য আর নৈকট্য পেয়ে আনন্দিত। রবীন্দ্রনাথ তার অনেক চিঠিতেই ভিক্টোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার শান্তিনিকেতন ঘুরে যাবার। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে নি।
তবে ছবিতে রবি ঠাকুরের প্রেমের চাইতে তার শিক্ষাভাবনা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এসবই উঠে এসেছে জোর দিয়ে। ছবিতে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভিক্টর ব্যানার্জি এবং ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর চরিত্রে আর্জেন্টাইন অভিনেত্রী এলেনোরা ওয়েক্সলার। এছাড়া শান্তিনিকেতনে বেড়ে ওঠা এক মেয়ের চরিত্রে আছেন রাইমা সেন।