বিশ্বের মোট ৭.৬ বিলিয়ন জনগোষ্ঠীর ২৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১.৮ বিলিয়ন প্রতি বছরের মতো এবারও পুরো একমাসের জন্য সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সিয়াম পালন করছেন।
কিন্তু মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র এই মাসটিতে একজন অমুসলিম হিসেবে কি আপনার এমন বিশেষ কিছু করা উচিত, যাতে সারাদিন রোজা রেখে অভুক্ত থাকা আপনার মুসলিম বন্ধু, সহকর্মী বা বন্ধুর মতো প্রতিবেশীর সামনে বেকায়দা কোনো আচরণ করে ‘অনুভূতিহীন’ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে না হয়?
উত্তর হলো: না। আপনি একজন সহানুভূতিশীল, যত্নশীল মানুষ, এটাই যথেষ্ট। কিন্তু তারপরও যদি নিচের কয়েকটি বিষয় জানা থাকে, তাহলে রমজানের সময় নিজের বিবেককে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে আপনার জন্য সহজ হবে।
# রোজাদারের সামনে আপনি খেতে পারেন, তবে…
বিশ্বজুড়ে রমজানের টানা ২৯/৩০ দিন মুসলিমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার এবং পানি থেকে দূরে থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে চক্ষুলজ্জার খাতিরে আপনিও না খেয়ে থাকবেন। পরিচিতদের সামনে আপনি খেতেই পারেন।
তবে খুব ভালো হয় যদি যেখানে সেখানে না খেয়ে খাবার গ্রহণের নির্ধারিত জায়গায়, অর্থাৎ প্যান্ট্রি, ক্যান্টিন বা রেস্টুরেন্টের মতো স্থানে খাবারটা খান। রোজাদারের সামনে খাবার খেলেও তিনি কিছু বলবেন না, কিছু মনেও করবেন না হয়তো। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে গিয়ে খেলে হয়তো একটু খুশি হবেন।
# রোজা থাকতে হবে না, তবে ইফতারে আপনি আমন্ত্রিত
আপনি অমুসলিম হয়েও যদি সারাদিন উপোস থেকে বুঝতে চান রোজা রাখতে আসলে কেমন লাগে, সেটা আপনি করতে পারেন। কিন্তু এর আসলে দরকার নেই। আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিও এমনটা চাইবেন না।
কিন্তু আপনি চাইলেই দিনশেষে ইফতারে মুসলিমদের সঙ্গে অংশ নিতে পারেন। এতে বরং সবারই ভালো লাগবে।
# রমজানের শুরু-শেষ জানাটা জরুরি না
রমজান মাসের শুরু ও শেষ হয় চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। দিনটি ক্রিসমাস বা থ্যাংকসগিভিংয়ের মতো আগে থেকে পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে নির্ধারিত থাকে না। তাই আপনি যদি বিশেষ করে কোনো মুসলিম প্রধান দেশে না থাকেন এবং না জানেন রমজান কবে শুরু হচ্ছে বা শেষ হচ্ছে, তবে সেটা মোটেও আপনার দোষ নয়।
# কিন্তু জানলে একটু বুঝতে চেষ্টা করবেন প্লিজ…
এই জটিলতাটা হতে পারে মূলত মুসলিম প্রধান নয় এমন দেশগুলোতে। আপনি রমজান মাস কবে থেকে শুরু হচ্ছে তা খেয়াল রাখবেন না এটাই স্বাভাবিক। তাই যদি আপনার কোনো সহকর্মী বা অধীনস্থ কর্মী এসে বলেন: ‘আমি আগামীকাল থেকে একটু আগে এসে আগে চলে যেতে চাইছিলাম’, তার অনুরোধটা রাখার চেষ্টা করবেন।
# কফি খাবেন? সঙ্গী হতেই পারি
সিয়াম পালন অবস্থায় একজন মুসলিম কিছুই খেতে পারবেন না, এমনকি পানিও নয়। তবে আপনি চাইলে আপনার বন্ধু বা সহকর্মীটি সানন্দেই আপনার দৈনিক কফি খাওয়ার সময় সঙ্গ দিতে সাথে গিয়ে বসতে পারেন। এতে তো কোনো বাধা নেই।
# তবে একটু দূরত্ব থাকতেই পারে
সারাদিন কোনো খাবার বা এক ফোঁটাও পানি না খেয়ে থাকলে বেশিরভাগ মানুষের মুখে স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের দুর্গন্ধ তৈরি হয়, তা সে যতই পরিচ্ছন্ন থাকুক না কেন। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘হ্যালিটোসিস’। তাই এ সময় আপনার খুব কাছের মুসলিম বন্ধুটিও যদি একটু দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আপনার সাথে কথা বলেন, সেটা নিয়ে মন খারাপ করবেন না।