বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের পর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলা আফগানিস্তান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি বলেছেন, গত কয়েক বছরে দীর্ঘতম ফরম্যাটে তার দলের এই অগ্রগতি নিয়ে তিনি খুবই গর্বিত। পরে নিজের ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা দিয়ে গর্বিত নায়ককে সম্মানিত করেছেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান।
বাংলাদেশকে টেস্টে হারিয়ে চমকের সঙ্গে ইতিহাস গড়েছে আফগানিস্তান। একমাত্র টেস্টে রশিদ খানের দল জয় পায় ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে।
ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচেই শেষবার খেলেন নবি। তাকে নিয়ে রশিদ বলেছেন, ‘নবি আমাদের মতো স্পিনারদের প্রচুর সাহায্য করেছে। যে কারণে, নবিকে আমার ম্যাচের সেরার পুরস্কারটা দিয়ে দিলাম। একটাই ভালো ব্যাপার যে, ওকে ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টিতে পাব।’
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে ব্যাট হাতে (০, ৮) তেমন কিছু করতে না পারলেও বল হাতে চার উইকেট নেন নবি। প্রথম ইনিংসে তিন উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে নেন একটি উইকেট।
তবে আফগানিস্তানের হয়ে তিন ফরম্যাটের প্রতিটির অভিষেক ম্যাচেই দেখা গেছে নবিকে। গত এক দশকের বেশি সময় তিনি ও তার দল কী করেছে সেটা দেখা যায় চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের পর।
নবি বলেছেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল আফগানিস্তানের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলার। আমরা খুব অল্প সময়ে এর জন্য সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করেছি। গত ১৩ থেকে ১৪ বছর নয়, আমরা লক্ষ্যটি সাত থেকে আট বছরে অর্জন করেছি। আমরা অনেক লড়াই করেছি, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল, একটি দল সমন্বয় করতে হয়েছিল। আমরা খেলেছি। আইসিসির ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে তিনবারের মধ্য আমরা দুবার জিতেছি এবং একবার রানার্সআপ হয়েছি।’
নবির কথা যেন থামছিলই না, ‘এটি খুবই ভালো ফলাফল এবং সেই কারণে আইসিসি আমাদের টেস্টের মর্যাদা দিয়েছে। আমি আফগানিস্তানের সেই প্রজন্মের অংশ হতে পেরে খুব আনন্দিত।’
তরুণদের জন্য সুযোগ উন্মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে গত সপ্তাহে ৩৪ বছর বয়সী এই তারকা টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, ক্রিকেটে আফগানদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
নবির কথায়, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক জয়, কারণ এই ফরম্যাটে আমরা নতুন এসেছি। তবে আমরা ভারত, আয়ারল্যান্ড এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছি এবং আমরা দুটিতে জিতেছি। এর অর্থ হল আমরা এই ফরম্যাটে ভালো এবং আমাদের ঘরোয়া কাঠামো শক্তিশালী।’
দেশের তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে নবির কথা, ‘তরুণরা যেভাবে খেলছে, যেভাবে তারা কন্ডিশনের সাথে সামঞ্জস্য করছে, এটি সত্যিই একটি দুর্দান্ত দল। এই ফরম্যাট তরুণদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হতে পারে। আমার পরিকল্পনা হল তরুণরা আমাদের জন্য ভবিষ্যৎ হবে এবং পরবর্তী টেস্টের জন্য তাদের প্রস্তুত হওয়া উচিত। এ কারণেই আমি টেস্ট ম্যাচ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিতে মনোনিবেশ করব।’
বৃষ্টি বিঘ্নিত শেষদিন জিততে হলে আফগানদের দরকার ছিল ৪ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ অধিনায়ক কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেননি।
বাংলাদেশের বাকি চার উইকেটের মধ্যে একাই তিন উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানকে জেতান রশিদ। প্রথম ইনিংসে ছিল ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে আফগান স্পিনার নেন ৬। সব মিলিয়ে ১০৪ রানে ১১ উইকেট। এতেই শেষ নয়, ইমরান খান ও অ্যালান বর্ডারের পর অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই ১০ উইকেট ও হাফসেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেন রশিদ।
বছর দেড়েক আগে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আফগানিস্তান এখনো পর্যন্ত মাত্র তিনটি টেস্ট খেলেছে। চলতি বছর ভারতের বিরুদ্ধে ছিল তাদের প্রথম টেস্ট। বিশ্বকাপের আগেই আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল তারা। এবার বাংলাদেশের মতো দলকে হারিয়ে দিলেন রশিদরা।
রশিদ এক টেস্টের সিরিজ জেতার পর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মতো বড় দলকে হারিয়ে টেস্ট জেতা আমাদের কাছে অবশ্যই বিরাট ব্যাপার। এই ফরম্যাটে আমরা নতুন। তবে, ক্যারিয়ারে এমন উত্তেজক ম্যাচ আমি আর কখনো খেলিনি।’
সঙ্গে তার সংযোজন, ‘ম্যাচটাতে আমরা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং সব বিভাগেই সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তবে, ব্যাটসম্যানদের আলাদা করে কৃতিত্ব দিতেই হবে। ওরা বোলারদের লড়াই করার মতো যথেষ্ট রান এনে দিয়েছিল।’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে তিন আফগান ক্রিকেটারের অভিষেক হয়েছিল। ইব্রাহিম জাদরান, কাইস আহমেদ, জহির খানদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। রশিদ বলেছেন, ‘তরুণ ক্রিকেটাররাই ভবিষ্যৎ আফগানিস্তানের।’