সরকার ঘোষিত মজুরি পুনঃর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বলেছেন, তাদের মূল মজুরি বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধির নিয়ম চালু করতে হবে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে এমন দাবি জানানো হয়। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের (এনজিডব্লিউএফ) ব্যানারে এই অনশনের আয়োজন করা হয়।
প্রতীকী অনশনে সংগঠনটির সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লা চৌধুরী, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের সদস্য সচিব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ।
এনজিডব্লিউএফের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘তুরস্কে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ৫১৭ ডলার, শ্রীলংকায় ১৯৭ ডলার, চীনে ১৬৫ ডলার, ভিয়েতনামে ১১৬ ডলার, পাকিস্তানে ১১৯ ডলার।
এছাড়া বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন ১৭ হাজার টাকা, সরকারি শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১৫ হাজার টাকা। বেসরকারি ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার ৮শ টাকা, জাহাজ ভাঙা শ্রমিকদের বেতন ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক খাত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ৮ হাজার টাকা! এটা অপ্রতুল এবং অগ্রহণযোগ্য। তাই এই মজুরি বাড়াতেই হবে।’
বক্তারা বলেন, ১৯৯৪, ২০০৬ এবং ২০১০ সালে মূল মজুরি বা বেসিক ছিল ৬৫ শতাংশ। সেখানে ২০১৮ সালে মূল মজুরি করা হয়েছে ৫১ শতাংশ। এতে তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে বোনাস, ওভারটাইম, টার্মিনেশন বেনিফিট, ক্ষতিপূরণ কমে গেছে। তাই এটা বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করতে হবে।
বক্তারা গত মজুরি বোর্ডের ন্যায় শ্রমিকদের বাৎসরিক মজুরি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি না করে দ্রব্যমূল্য, বাড়িভাড়া, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদির কথা বিবেচনা করে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির দাবি জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিকফ্রন্টের ব্যানারে অন্য একটি বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করে বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা প্রচার করে প্রকৃতপক্ষে ৫ হাজার ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ৭ নং গ্রেডের মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণা করা হলেও অন্য গ্রেডের শ্রমিকদের মজুরি একই হারে বৃদ্ধি করা হয়নি। মালিক ও সরকার একজন নতুন শ্রমিকের মজুরি ৮ হাজার টাকা প্রচার করলেও তা ৫৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছে।
বক্তারা আরও বলেন, সরকার ও মালিকপক্ষ গেজেটে ৬ মাস শিক্ষানবিশ সময় এবং শিক্ষানবিশ শ্রমিকের মজুরি ৫৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। ফলে গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি প্রকৃতপক্ষে ৮ হাজার নয়, ৫৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়। তখন তাদের অন্য কারখানায় পুনরায় শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দিতে বাধ্য হয়।
এভাবেই একজন শ্রমিককে মাসের পর মাস ৭ নং গ্রেডের মজুরি থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকের মর্যাদা না দিয়ে কর্মীদের মজুরি বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।