বাঁধিয়ে রাখার মতো স্কোরকার্ড। স্ক্রিনশট নিয়ে সংগ্রহে রাখলে কেউ বাড়াবাড়ি মনে করবে না নিশ্চিত। দুই অঙ্ক পেরিয়েছেন সব ব্যাটসম্যানই। আছে একটি সেঞ্চুরি, সঙ্গে তিনটি ফিফটি। দল হয়ে ব্যাটিং, জুটি বেঁধে ছুটে চলা। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ২২ গজকে নিজেদের আবাস বানিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ তুলেছে ৫০৮ রান। প্রথম ইনিংসের দৈর্ঘ্য ১৫৪ ওভার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার পাঁচশ ছাড়াল বাংলাদেশের ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটে ১৯ বছরের পথচলায় এটি টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহে থাকছে সপ্তম স্থানে।
সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে সাদমান ইসলাম ও সাকিব আল হাসান সাজঘরে ফিরলেও ভুল করেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ছোট ছোট জুটিতে এগিয়ে গেছেন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দিনে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন রানের চূড়ায়।
যেভাবে পাঁচশ ছাড়াল বাংলাদেশ
প্রথম উইকেট জুটি-৪২ (সৌম্য-সাদমান)
দ্বিতীয় উইকেট জুটি-৪৫ (মুমিনুল-সাদমান)
তৃতীয় উইকেট জুটি-৬৪ (মিঠুন-সাদমান)
চতুর্থ উইকেট জুটি-১০ (সাদমান-মুশফিক)
পঞ্চম উইকেট জুটি-২৯ (মুশফিক-সাকিব)
ষষ্ঠ উইকেট জুটি-১১১ (সাকিব-মাহমুদউল্লাহ)
সপ্তম উইকেট জুটি-৯২ (লিটন-মাহমুদউল্লাহ)
অষ্টম উইকেট জুটি-২৩ (মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ)
নবম উইকেট জুটি-৫৬ (তাইজুল-মাহমুদউল্লাহ)
দশম উইকেট জুটি-৩৬ (মাহমুদউল্লাহ-নাঈম)
বড় সংগ্রহের আশা জাগে আগের দিনই। সাকিব-মাহমুদউল্লাহ জুটি ৬৯ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে যখন শেষ করেন প্রথম দিনের খেলা। ৫ উইকেটে ২৫৯ থেকে দ্বিতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশের ইনিংসে যোগ হয়েছে আরও ২৪৯ রান।
স্পিনদূর্গে মোস্তাফিজকে একাদশ থেকে ছেঁটে ফেলে ব্যাটসম্যান বাড়ানোয় রানটাও বেড়েছে। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটন দাস নেমে করেছেন ফিফটি। শেষের দিকে তাইজুল ইসলাম খেলে গেছেন ২৬ রানের ইনিংস। নবম উইকেট জুটিও পেরিয়ে যায় অর্ধশতক ৫৬। দশম উইকেটে ৩৬।
ম্যাচের ৮০ ওভার পার হতেই নতুন বল হাতে তোলার সুযোগ ছিল উইন্ডিজের। সফরকারীরা নতুন বল হাতে নেয় দ্বিতীয় দিনের শুরুতে, ৯১তম ওভারে। চকচকে বলটার ধার কমিয়ে দেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ মিলে। রানও আসছিল দ্রুতগতিতে। শুরুর ৫ ওভারে আসে ৩১। দিনের প্রথম ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই সাকিব-মাহমুদউল্লাহ জুটি ছুঁয়ে ফেলেন তিন অঙ্ক।
সাকিব নিজেও আশা জাগিয়েছিলেন সেঞ্চুরির। ব্যক্তিগত ৮০ রানে কেমার রোচের সাধারণ এক ডেলিভারিতে গালিতে ক্যাচ দিয়ে পেস আক্রমণে ক্যারিবীয়দের সফল করে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ততক্ষণে অবশ্য ৩০০ পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আগের দিন ক্যারিয়ারের ২৪তম ফিফটি ছুঁয়ে ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন সাকিব। খেলেন ১১৩ বল। এদিন ২৫ রান যোগ করেন মাত্র ২৬ বলে। মারেন দুটি চার। ইনিংসটি সাজান ৬টি চারে।
সাকিবের পর ওয়ানডে স্টাইলে ফিফটি করেন লিটন। লাঞ্চ বিরতির খানিক পর অফস্পিনার ব্র্যাথওয়েটের লেগস্টাম্প বরাবর ডেলিভারিটি রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন এ ডানহাতি। ৬২ বলের ইনিংস থামে ৫৪ রানে। সর্বোচ্চ ৮টি চার ও একমাত্র ছক্কাটি আসে লিটনের ব্যাট থেকেই। ততক্ষণে বাংলাদেশের সংগ্রহ চারশ ছুঁইছুঁই (৩৯৩)।
মাহমুদউল্লাহ আগাতে থাকেন চেনাছন্দে। বছরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তোলার আগে কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে যখন ২ রান দূরে নাভার্স নাইনটিজের চাপ বেশ ভালভাবেই অনুভব করেন। বোলারদের একের পর এক ডট দিয়ে নিজের উপর কিছুটা বিরক্তও হয়ে উঠেছিলেন! গালিতে খেলে রান নিতে ছটফট করতে গিয়ে আরকটু হলে রানআউটও হতে বসেছিলেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরে অফস্পিনার রোস্টন চেজকে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে তুলে নেন প্রত্যাশিত সেঞ্চুরি। খেলেন ২০৩ বল। ৬টি চারে সাজান ইনিংস। শেষঅবধি ২৪২ বলে ১০ চারে ১৩৬ রান করে আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। যেটা তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।