দেশব্যাপী মাদকের ভয়াবহতা যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনই এ বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিও লক্ষণীয়। এরই ধারাবাহিকতায় মাদক মামলায় অভিযুক্ত দুই যুবকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন কুষ্টিয়ার একটি আদালত। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক অরুপ কুমার গোস্বামী আসামীদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এর আগের মেয়াদের শেষ দিকে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তখন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বহু মানুষ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছিলেন। তখন থেকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ হয়েছে মাদকের প্রসার। যদিও বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলা আমাদের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।
মাদকবিরোধী ওই অভিযান কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও শেষ পর্যন্ত মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের ব্যবস্থাকেই সমর্থন করেছেন সাধারণ মানুষ। এখনও সাধারণ মানুষ মাদকের ছোবল থেকে বাঁচতে চান।
তবে মাদক ব্যবসায়ীরা সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটেই এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিল সরকার। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদের শেষ দিকে অর্থাৎ ২০১৮ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মাদকের ব্যবহার, পরিবহন, চাষাবাদ, উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল পাস করা হয়।
এ বিষয়ে সরকার এতটাই কঠোর ছিল যে, ওই বিলের ওপর দেয়া বিরোধী দলীয় সদস্যদের সংশোধনী, জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছিল। তবে এরপরও মাদক ব্যবসা বা এর প্রসার যে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে তা নয়।
কুষ্টিয়ার এ ঘটনায় অবশ্য ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর বার্তা যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর পাশাপাশি সরকারি দলের কারও ছত্রচ্ছায়ায় কেউ কেন এ ব্যবসা করতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া মাদকের অবৈধ ব্যবহার শূন্যের কোটায় আনতে মাদকবিরোধী প্রচারণা এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকার এবং বিচার বিভাগের এই অবস্থান সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। একইসঙ্গে মাদকের অপব্যবহার বন্ধে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।