২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু, এতো সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি তথা সার্বিক বিষয় নিয়ে ২০১৬ সালে একটি গবেষণা করে বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা ফলাফলে কর্মসংস্থান চ্যালেঞ্জের তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে শুধু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এমন নয়। মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে সে জায়গায় টিকেও থাকতে হবে। এজন্য ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। যেখানে প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার, সেখানে এখন কর্মসংস্থান হচ্ছে গড়ে মাত্র ৯ লাখ লোকের। বাকি ১১ লাখ লোক কর্মের উপযোগী থাকলেও তারা কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার থাকছে।
গবেষণায় বলা হয়, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র হ্রাস করে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে আগামী দশকে প্রতিবছর যে ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে আসবে তাদেরকে উপযুক্ত চাকরি দেয়া। কিন্তু বাংলাদেশে চাকরি করার উপযুক্ত এমন ১০ কোটি ৩৩ লাখ লোকের মধ্যে মাত্র ৫ কোটি ৮১ লাখ লোক চাকরিজীবী। সে হিসাবে দেশের প্রায় অর্ধেক কর্মউপযোগী মানুষ বেকার থেকে যাচ্ছে। তাই দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনে এসব লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে ওই গবেষণা বলা হয়, ২০০৮ সালে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন কমিশন পরামর্শ দেয় যে, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বিশ্বের ১৩টি দেশ বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী তাদের মেধা ও সম্পদ কাজে লাগিয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেত সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশকেও সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে হবে। বাড়াতে হবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি।
তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ভাল করছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ইতিমধ্যে আন্তার্জাতিক বাজারে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্টে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তৈরি পোশাক রপ্তানির ফলে তা সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের দ্বিতীয় সবোর্চ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বিদ্যমান বাজার ধরে রেখে ও নতুন বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে এই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরো বাড়ানো সম্ভব। বিশেষ করে চীন, জাপান, ভারত ও আশয়িানভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে হবে।
চাকরিক্ষেত্র তৈরি করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রম অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আমিনুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আওতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ব্যবসার সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে কাজ চলছে। ব্যবসার আওতা বাড়লে বেসরকারি খাতে চাকরিক্ষেত্র তৈরি হবে। তখন লোকের বেকারত্বও কমে আসবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, প্রতিবছরই ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের চাহিদা তৈরি হয়। কিন্তু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় মাত্র ৯ লাখ লোকের। বাকি ১১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয় না। তবে মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে শুধু এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এমন নয়। মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে সে জায়গায় টিকেও থাকতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের মতে মধ্য আয়ের দেশের পৌঁছানোর তিনটি স্তর রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিম্ন মধ্যম, মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে। আমরা এখন নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে অবস্থান করছি। মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। এজন্য দরকার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি। আর মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছতে হলে বাংলাদেশকে ইউএনএর স্বীকৃতি পেতে হবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বিশ্বব্যাংক মধ্যম আয়ের দেশ বলতে যা বুঝাতে চায় তা অনেক উঁচু মানের। যা ২০২১ সালের আগে অর্জন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ২২ লাখ কর্মী শ্রমবাজারে প্রবেশের উপযুক্ত হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে কাজ পায় মাত্র সাত লাখ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের হার কমেছে। পরের তিন বছর অর্থাৎ ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই শ্রমবাজার সংকুচিত হবে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান কমেছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ হারে। আর ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৪ শতাংশ হারে কমবে।