আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্রেডিট রিপোর্টকে গুরুত্ব না দেওয়ায় সম্প্রতি ৬শ কোটি টাকার অনিয়মের ঘটনার পর দুর্বল এবং ভুয়া ক্রেডিট রিপোর্ট সরবরাহ ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাতের সংগঠন মিলে ক্রেডিট রিপোর্টের জন্য একটি তথ্য ভান্ডার তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় এমন পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, এতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঝুঁকি, খরচ, অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্র্যাকটিসেস অব অবটেইনিং ক্রেডিট রিপোর্ট অব ফরেন কাউন্টার পার্টস ইন ট্রেড সার্ভিসেস-ইজ ইট ওয়াকিং?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।
গবেষণা দলে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক অন্তরা জেরীন ও অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের যুগ্ম পরিচালক প্রদীপ পাল, ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহমুদুর রহমান এবং মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ টি এম নেছারুল হক।
শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, সম্প্রতি একটি রপ্তানি আদেশের বিপরীতে ২৬টি প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানি করার পরও পেমেন্টে পায়নি। আমদানিকারককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনায় ৬শ কোটি টাকা অনিয়মের ঘটনা পরে সবার নজরে আসে। ক্রেডিট রিপোর্ট অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ ধরণের ঘটনা ঘটত না।
তিনি বলেন, ক্রেডিট রিপোর্ট হল বিদেশী আমদানিকারক বা রপ্তানিকারকের বিষয়ে বিশদ বিবরণ। এর পিছনে প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি ডলার অর্থ ব্যয় হয়, যা অযৌক্তিক নয়। কিন্তু ক্রেডিট রিপোর্ট একদিকে যথাযথভাবে হয় না, অন্যদিকে গতবাঁধা হলেও এসব ক্রেডিট রিপোর্ট কোন ধরণের বিশ্লেষণ করা হয় না। ফলে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান জাল-জালিয়াতির সুযোগ পায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সেবার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে দক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে ব্যাংক এবং রাষ্ট্রীয় ঝুঁকি দুটোই বাড়বে।
তিনি বলেন, অর্থ পাচার ঠোকানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম যাতে না হয়, সেজন্য ব্যাংকারদের সর্তক থাকতে হবে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধূরী বলেন, ব্যাংকারদের আরও সচেতন হতে হবে। কারণ কেউ যেন ব্যাংকারদের ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা কিংবা টাকা পাচার করতে না পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থপাচারের ৮৩ শতাংশ হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। তবে ব্যাংক সতর্ক থাকলে কোন অনিয়ম ঘটার সুযোগ নেই।
কমার্সজ ব্যাংক এজির চীফ রিপ্রেজেনটেটিভ তৌফিক আলী বলেন, ব্যাংকের পরিচালকদের লোভের কারণে অনেক অনিয়ম -দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে। ব্যাংক পরিচালকদের লোভ সংবরণ করতে হবে। একই সঙ্গে ট্রেড সার্ভিস বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী, চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধূরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, কমার্জ ব্যাংক এজির চীফ রিপ্রেজেনটেটিভ তৌফিক আলী প্রমুখ।