চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানের ফলে ভিটেমাটি হারালেন পতেঙ্গার লালদিয়ার হাজার হাজার চরবাসী। তারা ৪৮ বছর ধরে সেখানে বসবাস করে আসছেন। প্রায় ৫২ একর জায়গা থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে থালা-ঘটিবাটি, কেউবা শেষ সম্বলটুকু নিয়ে চোখের পানি ফেলে ছেড়েছেন নিজের ঘর। দীর্ঘদিনের আশ্রয়স্থান হারিয়ে তাদের ঠাঁই কোথায় হবে সে নিয়ে অনিশ্চয়তায় ডুবে গেছেন।
সোমবার সকালে কর্ণফুলী নদীর তীর সংলগ্ন পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বন্দর ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর আগে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সেখানে বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
উচ্ছেদ অভিযানের তোড়জোড়ের মুখে দুদিন আগে থেকেই বাসিন্দারা ভিটেমাটি ছাড়তে শুরু করেন। এরপরও যারা থেকে গিয়েছিলেন, তাদের বাড়িঘর ভেঙে সরিয়ে দেওয়া হয়।
নগরীর পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য ১৯৭২ সালে কয়েক হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে সরিয়ে লালদিয়ার চরে পুনর্বাসন করে তৎকালীন সরকার। ১৯৭৫ সালের পর বিভিন্ন আইনি জটিলতার ফাঁকে লালদিয়ার চরের ওই ভূমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বিএস জরিপে লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর থেকে লালদিয়ার চরের বাসিন্দাদের বেআইনি বসবাসকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
২০০৫ সালের ১২ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ লালদিয়ার চরে বসবাসরত প্রায় ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করে সেই ভূমি ইজারা দেয় ইনকনট্রেড লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। সেখানে ওই প্রতিষ্ঠান একটি অফডক নির্মাণ করেছে। এরপরও লালদিয়ার চরে প্রায় ৫২ একর জায়গার ওপর ২৩০০ পরিবারের ১৪ হাজার মানুষ বসবাস করে আসছিল। তাদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে লালদিয়ার চরের কয়েক হাজার মানুষ মানববন্ধন করে উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবি জানান। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন লালদিয়ার চরবাসী।
এই বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেছেন: চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের এই জমি তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে লালদিয়ার চরের মানুষকে অমানবিকভাবে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
যদিও এর মধ্যেই নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম এসে লালদিয়ার চর এলাকায় উচ্ছেদে তাদের অনড় অবস্থানের কথা জানান।