তারা তিনজন খুবই শক্তিশালী রাজনীতিবিদ। প্রত্যেকেই এসেছেন সমাজের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্র থেকে। আগামী মে মাসে হতে যাওয়া ভারতের সাধারণ নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজয়ের পথে এই তিন নারীকে বড় হুমকি মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের একজন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। নেহেরু-গান্ধী পরিবারের এ সদস্য গত ২৩ জানুয়ারি কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। পশ্চিম উত্তর প্রদেশে দলটির হয়ে লড়বেন তিনি।
এছাড়াও সমস্যা তৈরি করতে পারে আরো দুই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ। তাদের একজন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আরেকজন উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী।
তারা তিনজনেই বড় জোট গঠন করে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালিয়েন্স (এনডিএ) জোট ভাঙার চেষ্টা করছেন। তবে এখনও তাদের মধ্যে কোনো চূড়ান্ত ঐক্যের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এনডিএ জোটের চেয়ে শক্তিশালী নারী নেত্রী রয়েছে বিরোধীদলের। আর সেটা দিয়েই তারা ভোটারদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের- এমনটাই বলেছেন ৮১ বছর বয়সী বিজেপি ছেড়ে যাওয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিং।
তিনি যোগ করেন, তাদের (এনডিএ) চিন্তা করা দরকার, বিশেষ করে তিনটি হিন্দিপ্রধান রাজ্যে হেরে যাওয়ার পর।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার খবর প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় সংবাদমাধ্যমে। সেখানে অনেক ভোটারের উল্লাসের ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই তাকে তার দাদি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিচ্ছবি হিসেবেও উল্লেখ করেন।
তার দেয়া বক্তৃতাও ভোটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবার সক্ষমতাও আলোচনায় আসে। যার অভাব আছে ভাই রাহুল গান্ধীর মধ্যে। ধারণা করা হয়, সেজন্য জনগণের কাছাকাছি যেতে পারেননি তিনি।
অন্য দুই নারীও মোদির ক্ষমতার মসনদ অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের রাজনীতির অভিজ্ঞতাও দীর্ঘদিনের। দুজনেই নিজেদের জোট থেকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার। ৬৩ বছর বয়সী মায়াবতী এরই মধ্যে নিজেদের বিরোধ ভুলে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) র সঙ্গে জোট গঠন করেছেন। দলটি মূলত উত্তর প্রদেশে দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
এমনই আরেকজন ৬৪ বছর বয়সী মমতা ব্যানার্জি। যিনি দুই দফায় রেলমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে তোলেন। পরে দীর্ঘ বছর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টকে হটিয়ে দেয় তারা। তার আহ্বানে কলকাতায় বিজেপি বিরোধী বিশাল র্যালি হয়। যেখানে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেয়।
প্রথম দফা নির্বাচনের সময়েও অবশ্য নারী নেত্রীদের বিষয়টিকে উপেক্ষা করেননি মোদি। সেই সময়ে তিনি একটি প্রচারণা চালিয়েছিলেন, ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ নামে। মেয়ে ভ্রুণহত্যা নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। টয়লেট এবং ভর্তুকিসহ গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়ার বিষয়টিকেও নারী ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবেই দেখা হয়।
মোদির ২৬ জনের মন্ত্রিসভায় ছয়জন নারী আছেন। যদিও ক্ষমতা মোদিকেন্দ্রিক এবং রয়েছে বেশ কিছু জ্যেষ্ঠ নেতাও। বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মোদির অর্জনের কথাগুলোই তুলে ধরে ভোট চাওয়া হবে এবং বিরোধিদের হাতে সরকারের বা তাদের কর্মকাণ্ডের তেমন কোনো ইতিবাচক বিকল্প নেই।
কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মায়াবতীর বিএসপি এবং এসপি জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। যদিও তারা তাদের বিরুদ্ধে ৭৮টি আসনে নির্বাচন করবে। তবে সেই জোট গান্ধীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি যেখানে রাহুর গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধী বারবার জয় লাভ করেছে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে না।
তবে মায়াবতী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এসপির সঙ্গে জোটের ঘোষণায় কংগ্রেস ছিলো না। তাদের ভাবনা, নির্বাচনের আগে তাদের সঙ্গ তেমন একটা উপকারী হবে না। তবে বিএসপি মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কংগ্রেস প্রধান সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী এবং মমতা ব্যানার্জির খুব কাছের একজন দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কটা তিনি খুব উপভোগ করেন। তাই তার দুই সন্তানের সঙ্গে কাজ করা তার জন্য খুব কঠিন হবে না। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তো তিনি অনেক এগিয়ে, খুব অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না যদি রাহুল গান্ধী বা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অনুপ্রেরণা পেতে মমতা ব্যানার্জির দিকে তাকান।
তবে সব মিলিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মায়াবতী এবং মমতা ব্যানার্জি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী জোট। তাই বিজেপিকে ক্ষমতায় যেতে হলে একটু বাড়তি ভাবনা ভাবতেই হবে।