বিশ্বকাপে ভারতের সেমি থেকেই ছিটকে যাওয়ার কারণ কী? দেশটির সংবাদমাধ্যম দৈনিক জাগরণের দাবি, অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও সহ-অধিনায়ক রোহিত শর্মার দলাদলি! আসর চলাকালীন সময়ে ভারতীয় দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল, এমন বিস্ফোরক প্রতিবেদন ছেপেছে পত্রিকাটি। সেটি নিয়ে যখন ভারতময় হৈ-চৈ, তখন আগুন যেন উস্কে দিলেন রোহিত! দলকে ইংল্যান্ডে রেখে ভারত ওপেনার একাই ফিরেছেন দেশে!
শনিবার মধ্যরাতে মুম্বাই বিমানবন্দরে স্ত্রী-সন্তানসহ নিজে গাড়ি চালিয়ে রোহিতকে বের হতে দেখা যায়। সংবাদকর্মীরা তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও সাড়া দেননি ভারতের সহ-অধিনায়ক।
অথচ ভারতের পুরো দলের ফেরার কথা ১৪ জুলাই। রোহিত ফিরলেন তারও একদিন আগে। এবং একা! সেটিও আবার এমন এক সময়ে, যখন তার সঙ্গে অধিনায়ক বিরাট কোহলির দলীয় দলাদলির খবরে দেশটির ক্রিকেটাঙ্গন গুঞ্জনময়। যদি বিষয়টা সত্যি না হয় তাহলে কেন একা ফিরলেন রোহিত? সেই ফেরার সঠিক কারণ কী সে বিষয়ে আঙুল তুলে দিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো।
জাগরণের প্রতিবেদনে কী আছে? পত্রিকাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দলের অন্য ক্রিকেটারদের মতামতকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না অধিনায়ক কোহলি ও প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী। বিশ্বকাপ চলাকালীন অধিনায়ক ও কোচ মিলে নাকি একতরফা সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে দলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। শাস্ত্রীদের এমন প্রতাপ প্রতিপত্তির পেছনে নাকি রয়েছে বোর্ডের ক্রিকেট প্রশাসনিক কমিটির প্রধান বিনোদ রাইয়ের সমর্থন!
বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কোহলি ও শাস্ত্রীর বক্তব্যকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। আম্বাতি রাইডুকে ইংল্যান্ডের বিমানে ওঠার টিকিট দেননি নির্বাচকরা। তার পরিবর্তে বিজয় শঙ্কর দলে জায়গা পান। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল, শঙ্কর ক্রিকেটের তিনটি বিভাগেই (ফিল্ডিং, বোলিং ও ব্যাটিং) ভালো। অথচ বিশ্বকাপে এ নবীন নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার পরে চোটের জন্য ছিটকে যেতে হয় তাকে। জাগরণের প্রতিবেদন বলছে, শঙ্করকে দলে নেয়ার ক্ষেত্রে কোহলি ও শাস্ত্রী একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
রোহিত এবং জাসপ্রীত বুমরাহ ভারতীয় দলে নিয়মিত পারফর্মার। আর বাকিদের অবস্থা নড়বড়ে। একমাত্র কোহলির ঘনিষ্ঠ হলে তবেই দলে সুযোগ পান তারা! আর রোহিতপন্থী বলে পরিচিত যারা তাদের দলে জায়গা পাওয়া আবার কঠিন। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, লোকেশ রাহুলের মাথায় ছিল শাস্ত্রী-কোহলির আশীর্বাদের হাত। সেই কারণে গোটা টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকতা দেখাতে না পারলেও একাদশে থেকে গেছেন।
একই কারণে একজন স্পিনারকে খেলানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে যুজবেন্দ্র চাহালই ছিলেন এক নম্বর পছন্দ। সেখানে কুলদ্বীপ যাদবের জায়গা হয় ডাগআউটে। কারণ কোহলির সঙ্গে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোরে খেলেন চাহাল। তাই দলের অনেকেরই আস্থা হারিয়েছেন শাস্ত্রী ও বোলিং কোচ ভরত অরুণ। এক ক্রিকেটার নাকি জাগরণকে বলেছেন, ‘বিরাট ভাই তো ভালোই খেলেছেন। কিন্তু শাস্ত্রী আর অরুণ কবে পদত্যাগ করবে?’
বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েও যে কোহলি-রোহিত দ্বন্দ্ব চলছে তার খানিকটা নমুনা দিয়েছিল ভারতীয় প্রভাবশালী এক পত্রিকা। গ্রুপপর্বের এক ম্যাচে ভিআইপি বক্সে কোহলি ও রোহিতের স্ত্রী মাত্র চার চেয়ার দূরত্বে থাকলেও একবারও নাকি তাকাননি একে অপরের দিকে! ভারত দলের ফার্স্ট ও সেকেন্ড লেডির এমন শীতল সম্পর্ক যে নিজেদের তৈরি নয় সেটাই যেন জানিয়ে দিল জাগরণের প্রতিবেদনটি!