বিশ্বজুড়ে সকল মুসলামানদের নেতৃস্থানীয় আসনের দাবি করা সিরিয়া এবং ইরাকভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদিকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তান তালেবান। জঙ্গি গোষ্ঠিটির এমন অবস্থান নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। এরআগে আফগানিস্তান তালেবানও বাগদাদির খিলাফতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে।
সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে আফগান তালেবানের মতো পাকিস্তানের তালেবানও ইসলামিক স্টেটের বর্বরতার নিন্দা জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, “বাগদাদির খিলাফত ইসলামিক নয়। কারণ প্রকৃত খিলাফতে ন্যায্য বিচার দেয়া হয়, যেখানে বাগদাদির লোকেরা অন্যান্য গ্রুপের অনেক নিষ্পাপ মুজাহিদিনকে (যোদ্ধা) হত্যা করেছে।”
এছাড়াও বাগদাদি খলিফা নয় উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইসলামে খলিফা মানে যে পুরো মুসলিম বিশ্বকে নিজের নির্দেশনায় পরিচালিত করে। কিন্তু বাগদাদির কোনো কর্তৃত্ব নেই। তার শুধু নির্দিষ্ট জনগণ এবং ভূখন্ডের উপরই কর্তৃত্ব রয়েছে।”
অন্যান্য মুসলিম দেশ যেমন মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানে আইএস নেতার সীমিত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, বাগদাদি ইসলামিক খলিফা নয় কারণ ইসলামিক বিধি মোতাবেক তিনি মনোনীত হননি।
আফগানিস্তান তালিবান ও পাকিস্তান তালেবানের মধ্যে একটা শিথিল জোটের সম্পর্ক থাকলেও তারা আলাদাভাবেই পরিচালিত হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সরকারকে উৎখাত করে শরিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপর তালেবান নেতারা আইএসের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে তাদের কার্যক্রমে প্রকাশ পায়।
গত বছর আল কায়েদা থেকে উদ্ভুত জঙ্গি দল আইএস তাদের নেতা এবং দখলীকৃত ভূখন্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের প্রধানকে ‘খলিফা’ বলে ঘোষণা করে। আল বাগদাদি তার নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চান। বিভিন্ন প্রত্যাশা দ্বারা চালিত আইএস দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে খুব কমই অগ্রসর হতে পেরেছে।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানায়, পাকিস্তানি গ্রুপগুলোর সাথে আইএসের কোনো আর্থিক সংযোগ নেই। তবে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করায় আবারও এই অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির ব্যাপরে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তান। নিরাপত্তার শূন্যতার সুযোগ নিয়ে হাক্কানি নেটওয়ার্ক এবং আইএস’এর মতো জঙ্গি গ্রুপ সক্রিয় হওয়ার অপচেষ্টা চালাবে বলে আশঙ্কা তাদের।
গত বছরের শেষ দিকে পাকিস্তান তালেবান থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া কিছু অংশ ইসলামিক স্টেটের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এবং অঞ্চল জুড়ে তার জঙ্গিদের বৈশ্বিক ইসলামিক খিলাফত প্রতিষ্ঠার অভিযানে যোগ দেয়ার আদেশ দেয়।
স্বল্প সংখ্যায় হলেও ইসলামিক স্টেটের আগমনে ইসলামি জঙ্গিদলগুলোর বিপক্ষে পাকিস্তানের যুদ্ধ আরও জটিল করে তুলবে বলেই প্রতিয়মান।
সাম্প্রতিক অতীতের তিক্ত আভ্যন্তরীণ দন্দ্বের পর পাকিস্তান তালেবান প্রভাবশালী মেহসুদের অংশ, ২০১৩ সালের শেষদিকে ক্ষমতায় আসা মুল্লাহ ফাজলুল্লাহ কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে। বিশ্বজুড়ে নিজেদের প্রভাববলয় বিস্তারে চেষ্টারত আইএস এই ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুবিধা নিতে পারে, যেখানে পশ্চিমা আদর্শের বিরুদ্ধ মতবাদে পূর্ণ এবং প্রচুর বেকার তরুণ রয়েছে যারা বন্দুক তুলে নিতে এবং ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।
এই বছরের শুরুতে আফগান তালেবান আল-বাগদাদিকে একটি চিঠির মাধ্যমে আফগানিস্তানে তার সদস্য সংগ্রহ বন্ধ করতে বলে। ‘একটি পতাকা, একটি নেতৃত্ব’এর অধীনেই যথাযথভাবে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের লড়াই পরিচালিত হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।