একুশে বইমেলায় এক ইউটিউবার বাংলা-ইংরেজির মিশেলে বই লিখে চরম আলোচিত-সমলোচিত হয়েছিলেন। এবার অশোভন (ইনডিসেন্ট) শব্দ ব্যবহার করায় কোমল পানীয় কোকা-কোলার বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
কোকা-কোলার বোতলের লেবেলে মাথা নষ্ট, বাবু, ঢিলা, ফাঁপর, জান, গুটি, গাব, আগুন, কড়া, অস্থির, পার্ট, ব্যাপক, প্যারা’র মতো শব্দের ব্যবহারে এ রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কোকা-কোলার বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
সাধু ভাষা ও চলতি ভাষার ব্যবহারের যে সীমারেখা, তা যেন উঠেই যাচ্ছে! কোথায় কী ব্যবহার হবে, তার প্রভাব কী হবে, কোথায় কী করা যাবে বা যাবে না, এসব দেখার যেনো কেউ নেই! বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে। প্রচলিত শব্দের অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ থাকে। কিন্তু তার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নেই। এই শব্দগুলোর ব্যবহার আমাদের নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষা সম্পর্কে শুভ বার্তা দিচ্ছে না। প্রমিত বাংলাকে আরও ঋদ্ধ করতে নতুন নতুন শব্দ সংযোজন হয় ভাষায়। কিন্তু ব্যবহারিক ভাষার যথেচ্ছ সংযোজন ভাষার শ্রী বৃদ্ধি করে না। বরং প্রমিত ভাষাকে চর্চাকে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করে।
রুল জারি করে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তথ্যসচিব, শিল্পসচিব, সংস্কৃতিসচিব, আইনসচিব, শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কোকা-কোলাসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব চেয়েছেন হাইকোর্ট। তারা হয়তো একটি দায়সারা জবাব দেবেন, কোকা-কোলা কর্তৃপক্ষও হয়তো ওইসব লেবেলযুক্ত পণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার ঘোষণাও দেবে। কিন্তু এসবই কি এর সুষ্ঠু সমাধান? কিছুদিন পরে হয়তো অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি একইধরণের ভাষা অবমাননাকর কাজ করে ফেলবেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় আরো সচেতন ও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমিকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজে ভাষা বিশৃঙ্খলাকে তদারকি করার দায়িত্ব তাদেরই। আশাকরি ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলো কঠোরতা ও কার্যকরভাবে দেখবেন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ।