Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

বাংলাদেশের আইসিইউতে মৃত্যুর বড় কারণ সুপারবাগ

আইসিইউ-সুপারবাগ
Advertisements

সংক্রমণনাশক প্রতিরোধী সুপারবাগ বাংলাদেশের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে (আইসিইউ) প্রায় ৮০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউ বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. সায়েদুর রহমান।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই চিকিৎসক বলেছেন, ২০১৮ সালে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হওয়া প্রায় ৯শ’ রোগীর মধ্যে ৪শ’জনই মারা গেছে। এবং এই মৃত্যুর ঘটনাগুলোর ৮০ শতাংশের জন্যই দায়ী ছিল ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ, যে সংক্রমণগুলোর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক কোনো প্রভাব ফেলে না।

বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানকে বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জটিলতার চালক হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। এর কারণ দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার ভুল পদ্ধতি, গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ সেবন এবং বেআইনিভাবে ডাক্তারের চিকিৎসাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ডা. সায়েদুর রহমানের মতে, যেসব রোগীরা মারা যান তাদের বেশিরভাগই সরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন, যেখানে এএমআর পর্যবেক্ষণ বা নজরদারির কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেই।

‘এ বিষয়টাতে আরো বেশি কঠোরতা অবলম্বন করা উচিত। অ্যান্টিবায়োটিক এভাবে যত্রতত্র বিক্রি হওয়া ঠিক নয় এবং কিছু কিছু ওষুধ শুধু হাসপাতাল থেকেই বিক্রি করা উচিত,’ বলেন তিনি।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) মূলত সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে ওঠে। অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের সংস্পর্শে আসতে আসতে অণুজীবগুলো ধীরে ধীরে জিনগত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তাদের বিবর্তনের সাথে সাথে তাদের ওপর অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব দিন দিন কমতে থাকে। যার ফলে এসব অণুজীবের সংক্রমণ চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলো এক পর্যায়ে সেটি আর কাজ করে না।

২০১৫ সালে ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সাইন্টিফিক রিসার্চ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ রোগী কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন।

বিএসএমএমইউ’র মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ বলেন, বছর দশেক আগেও পরিস্থিতি এরকম ছিল না। তার মতে, বাংলাদেশে আইসিইউগুলোতে হওয়া মোট মৃত্যুর ঘটনার ৭০ শতাংশই সুপারবাগের সঙ্গে সম্পর্কিত।

তিনি বলেন, ‘মূলত ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য নতুন ধরনের কোনো অ্যান্টিবায়োটিক এখন তৈরি হচ্ছে না। পাশাপাশি বর্তমানে যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো ব্যবহার হতে হতে‌ মানবদেহে তাদের কার্যকারিতা হারাচ্ছে। যার ফলে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।’

সামনের বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী সুপারবাগের ঝুঁকি ব্যাপক হারে বাড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় হুঁশিয়ার করা হয়েছিল, যদি শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ এএমআর’র কারণে মারা যাবে। ২০১৮ সালে দেখা গেল, গবেষণায় আশঙ্কা করা সংখ্যাটি বাস্তবে আরো অনেক বেশি। এন্টিবায়োটিক ঠিকমত কাজ না করায় ওই বছর ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এমনকি ডায়রিয়ায় আশঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।

Exit mobile version