১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যা। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক। ভোরের কাগজ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করি । এছাড়া শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক ছাত্র কমান্ডের আহবায়ক ও চৈতালী নামে ত্রৈ-মাসিক প্রকাশনার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করি।
বানবাসী মানুষের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি শুরু। শিবগঞ্জ বাজারে সকালে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি। সুতিয়া নদীতে ত্রাণের চাল লঞ্চে উঠানো হলো। ( এই ত্রাণ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সহায়তায়)।সাথে একটি মাইক। সুতিয়া নদী দিয়ে লঞ্চ ছাড়লে আমাদের প্রচেষ্টা প্রথম দিন ৪ টি ইউনিয়নের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের মাঝে ত্রাণের চাল পৌছাঁনো সম্ভব। লঞ্চে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ চাচা। আমাকে আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ চাচা আগের রাতে বললেন, “লঞ্চে অনেক দলীয় নেতা আর ছাত্রলীগের সেচ্ছাসেবক, যারা বন্যার পানিতে নেমে ত্রাণের চাল দেওয়ার কাজ করার দায়িত্বে থাকবেন, তারা একটা সময় ক্ষুধার্ত হওয়া স্বাভাবিক !
কি করা ? আমি বললাম, যেহেতু সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লঞ্চে থাকতে হবে।
তাহলে একটা শুধু খিচুড়ি হলেই হবে মনে হয় । তিনিও সম্মত হয়ে বললেন, হ্যাঁ তাই, কিন্তুু একেবারেই সাদাসিধে একটা খিচুড়ি । প্যাকেট করার দরকার নাই। খাবারের থালা লাগবে না। একটা বেশ বড় বালতি হলেই চলবে। কিন্তুু টিউবওয়েল থেকে কলসিতে পানি নিতে হবে লঞ্চে। তাই করা হলো। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের এক বেলা কোনো রকম আহারের জন্য রান্না করা এই সাদামাটা খিচুড়ির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একজন কর্মীকে। ( নাম না বলি )। কারণ নিজ দলের কর্মী।
ত্রাণ বিতরণ শেষ করার স্পট গয়েশপুর বাজার। ক্লান্ত সবাই। লঞ্চ ও মাইকের শব্দ, তারপর বন্যার্ত মানুষদের ঘরে ঘরে, পানিতে নেমে গিয়ে ত্রাণ দেওয়ার কাজ। খুবই কষ্ট হয়েছে সবার৷
এবার ক্লান্ত সকলে অল্প অল্প করে খিচুড়ি আর পানি খেয়ে উপজেলা সদরের দিকে ফের লঞ্চের মাধ্যমেই ফেরার সিদ্ধান্ত হলো। কারণ আগামীকাল সকাল থেকেই ব্রক্ষ্মপুত্র নদের ওপারে চরাঞ্চল। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা।
কিন্তু কারও আর খিচুড়ি খাওয়া হলো না। লঞ্চে থাকা খিচুড়ির বালতির দায়িত্বের ওই ছাত্রলীগ ও তার সাথে নিয়ে আসা কয়েকজন খেয়ে প্রায় শেষ করে দিয়েছেন। কি আর করা ! প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ চাচা মারাত্মক রাগে উত্তেজিত ! এসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আমীর হোসেন চাচা ওই খাদক ভদ্রলোক নিজ দলের কর্মীর নামটা বললেন এহেন কাজটা করেছেন জন্য’ খান এ ‘ ( নামটা না বলি)।
এবার সবার পেটে ক্ষুধা থাকার পরও এই কথা শুনে সবাই হাঁসলেন। প্রাক্তণ সংসদ সদস্য মরহুম আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ চাচা ওই কর্মীকে একটা সময় আর তিনি তার কাছে কখনই আসতে দেননি।কয়েকদিন পর দেখলাম তদানীন্তন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী, শেখ হাসিনা নিজে ১৯৯৮ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নিজে রুটি বানাচ্ছেন। সেই সময় ছিলোনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পত্রিকায় দেখে আমরা ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতা কর্মীরা শুরু করলাম বন্যার্তদেরকে রুটি তৈরি করে বিতরণ কর্মসূচি।
এবার সিদ্ধান্ত সবাইকে বাড়ি থেকে খেয়ে আসতে হবে। সারাদিন অভুক্ত থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম। মাত্র ৮ দিনে ত্রাণ কার্যক্রম সমাপ্ত হলো পুরো উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায়।
দুঃখ একটাই সেই সময় নব্বই দশক ও পরে ২০০১ খেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যারা দলের জন্য নিবেদিত ও নির্লোভ হয়ে কাজ করেছিলেন তারা অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সবচেয়ে করুণ কথা, অবশ্য আমি কখনো এই শব্দ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নই ‘ অনুপ্রবেশকারী’। তবে এ লেখায় বলছি, সেই সময়ের ত্যাগী নেতা কর্মীদের একটা বৃহৎ অংশ নিরবে নিভৃতে অনুপ্রস্থান করেছেন। তবে এখনো আদর্শচ্যুত হয়নি।
আরেকটি বিষয় বর্তমানে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দলীয়ভাবে জনপ্রতিনিধি ( সবাই নয়) তৎকালীন সময়ে অনেকেই রাজনৈতিক মাঠে ছিলেন না। গফরগাঁওয়ে তাদের অনেকের রাজনীতিতে অভিষেক হয়েছে ২০০৮ সালের কিছু পরে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে। মোট কথা দলের সুসময়ে। দুঃসময় তাদের কাছে রুপকথার গল্প মনে হয় বলে আমার ধারণা। তৃণমূলে উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে অভিষেক হলেও মাঠের রাজনীতিকে ছিলেন না কেউ কেউ। বিগত ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে দিতে এক সময় মনে হতো, আদালতের পাশে যদি কোনোরকম থাকতে পারতাম! কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। কারণ, বিএনপি জামায়াতের পেটুয়া বাহিনীর অত্যাচারের ভয়। যাক, পুরনো দিনের কথা মনে করেই বা কি হবে। এখনো মনে পড়ে ময়মনসিংহ আদালত পাড়ার চা – বিস্কুটের কথা। কি স্বাদ। এখন ডাল আর ভাত। হয়তো সৎ পথে রুটি রুজি করতে পারলে। দুঃখ নেই, কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আমাদের আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গণমানুষের কষ্ট লাগবে যেভাবে নিজে কাজ করেছেন, এখনও করে যাচ্ছেন, তা সত্যিকার প্রশংসার দাবি রাখে।
নিজে কখনো কোনো সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করিনি। নিভৃতে নিরবে দলের জন্য যে কাজ করেছি সব সময় তা আর বলতে চাই না।
কিন্তুু অনেকেই এই অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে কতক্ষণ ইতিবাচক লিখেন, তবে নামক একটা শব্দ শুরু করে দিয়ে – ই- সরকারের নীতিবাচক বাক্য তুলে ধরেন।
তখন আর গঠনমূলক সমালোচনা থাকে না।
এই তবে শব্দের পর ………..।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বেশী সুবিধা পেয়েছেন, তারাই সমালোচনা বেশী করেন। এখনও তাই । কারণ জানা নাই ! ভাবিও না !
কিন্তু যারা কখনও সুবিধা পাইনি, বা গ্রহণ করেননি, ত্যাগী, নির্যাতিত নেতা কর্মী, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, নানা ফোরামে সব জায়গায় এখনও আওয়ামী লীগের সফলতা তুলে ধরেন। ইতিবাচক বিষয়গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন।
তাদের ইতিবাচক লেখার মাঝে ‘ তবে ‘ শব্দটা খুবই কম বটে ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)