দুই বছর আগের কথা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। সেই সিরিজে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের নেতৃত্বে ছিলেন ড্যারেন স্যামি। শুরুর আগের দিন যথারীতি ‘ট্রফি-উন্মোচণ’ অনুষ্ঠান। ছোট্ট এই আনুষ্ঠানিকতা সব সিরিজের আগেই হয়ে থাকে। দুই অধিনায়ক ট্রফি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে ফটোসেশনে অংশ নেন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য অত্যন্ত ‘চিত্তাকর্ষক’ এক ফুটেজ।
মিরপুরের হোম অফ ক্রিকেটে ক্যামেরার সামনে এসেই ড্যারেন স্যামি হাঁটু গেড়ে প্রায় বসেই পড়লেন। ক্যামেরার সামনে-পেছনের মানুষজন তখন হেসে অস্থির। স্যামি আসলে স্বভাবসুলভ দুষ্টুমিটা করেছিলেন তার প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সঙ্গে। উচ্চতায় মুশফিকুর রহিম ড্যারেন স্যামির প্রায় অর্ধেক। তবে শুধু উচ্চতার কারণেই নয় নিজের দল যখন আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর থাকে তখন যেকোনো দুষ্টুমিই কেমন যেনো মানিয়ে যায়। পোজ দেওয়া দুজন মানুষের মধ্যে ট্রফিটাকে মনে হয় ওই আত্মবিশ্বাসী মানুষের নিজের সম্পদ। চরম নাটকীয়তার পর অবশেষে ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজটা জিতে নিয়েছিলো মুশফিকের বাংলাদেশ।
প্রতিপক্ষের অধিনায়কের সাথে শরীরি ভাষা এবং উচ্চতার পরিবর্তন অবশ্য দূর হয়েছে গত দুটি সিরিজ থেকে। গত বছর ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে এবং চলমান পাকিস্তান সিরিজে। জিম্বাবুয়ে সিরিজ শুরুর আগে চট্টগ্রামে হয়েছিলো ট্রফি লাউঞ্চিং। পোজ দিতে ট্রফি নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন মাশরাফি মর্তুজা এবং এলটন চিগুম্বুরা। জিম্বাবুয়ে কিংবা বাংলাদেশ, তখনও কিন্তু কেউই জানে না কারও শক্তি। অথচ ক্যামেরার সামনে টগবগে লাগছিলো ম্যাশকেই। লাল সবুজ জার্সিতে আত্মবিশ্বাসী এক নেতার প্রতিচ্ছবি। আর পাশে চিগুম্বুরা যেনো ট্রফিতে হাত দিতেই ভয় পাচ্ছিলেন। কোন মতো ছুঁয়ে রেখেছিলেন একটা হাত। চট্টগ্রামে দুই ওয়ানডের পর ঢাকায় ফিরে আরও তিনটি জয়। জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইট ওয়াশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ট্রফি বুঝে নিয়েছিলো মাশরাফির দল।
চলতি বাংলাদেশ-পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি উন্মোচনেও শরীরি ভাষায় আধিপত্য বিস্তারের গল্পে বাংলাদেশই এগিয়ে। ট্রফি লাউঞ্চিংয়ের ছবিটা ভালো করে খেয়াল করে দেখুন, মনে হচ্ছে ট্রফিটা যেনো মাশরাফিকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন পাকিস্তান অধিনায়ক। আজহার আলি মনে হয় তখনই জানতেন টাইগারদের গর্জনে অসহায় আত্মসমর্পনের মাধ্যমে সিরিজ শেষ হতে যাচ্ছে। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচ এখনও বাকি। বাংলাদেশ আগামীকাল (২২ এপ্রিল) মাঠে নামবে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে। যে পাকিস্তানকে ক্রিকেটের যেকোন ফরম্যাটে হারাতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সত্যি ‘বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ’ একটা ফ্যাক্টর। ক্যারি অন টিম-টাইগার্স। গুড লাক মাশরাফি।