হার প্রায় উঁকি দিচ্ছিল। সেই অবস্থা থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সিলেট থান্ডার। টাই হল ম্যাচ, খেলা গড়াল সুপার ওভারে। কিন্তু ভাগ্য এবারও সুপ্রসন্ন হল না, নিজেদের শহর আর দর্শকের সামনে সুপার ওভারে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের কাছে হেরে গেছে তারা।
বোলাররা কাজটা ঠিকঠাকই সেরেছিলেন। ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রানের বেশি যেতে পারেনি কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। টি-টুয়েন্টিতে এই রান খুব বড় চ্যালেঞ্জ নয়, ব্যাটসম্যানরা স্বাভাবিক খেলাটা উপহার দিলেই সম্ভব। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা পর্বে যা হয়নি, সিলেটেও হল না। ১৪০ রানের জবাবে ম্যাচ টাই করে পরে সুপার ওভারের ভাগ্যের খেলায় হেরে যায় সিলেট!
সিলেট পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু করে শেষপর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি কুমিল্লা। লঙ্কান উপুল থারাঙ্গা ও সাউথ আফ্রিকান স্টিয়ান ফন জিল মিলে ৪২ রানের জুটি গড়েছিলেন। ১০ রান করা ফন জিল ফিরতেই শুরু হয় ভাঙন। এরপর ৫ রানে দ্রুতই ফেরেন সৌম্য সরকার।
ফিফটির সাড়া পাচ্ছিলেন থারাঙ্গা। ৩১ বলে ৪৫ করে তাকেও থামতে হয় সোহাগ গাজীর বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে। পরে সাব্বির রহমান, ইয়াসির আলিরা ফিরলে অল্পতেই থেমে যাওয়ার শঙ্কায় কুমিল্লা। তখন ১৪ বলে ১৯ করে দলীয় রানটাকে মোটামুটি ভদ্র চেহারা দিয়েছেন উইকেটরক্ষক মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
জবাবে কুমিল্লার বোলারদের তোপে শুরুতেই হোঁচট সিলেটের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সানজামুল ইসলামকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে খাতা না খুলেই সাজঘরে ওপেনার জনসন চালর্স। তৃতীয় ওভারে আফগান স্পিনার মুজিব-উর রহমানের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ২ রান করা আরেক ওপেনার রনি তালুকদার।
সপ্তম ওভারে জোড়া ধাক্কায় মোহাম্মদ মিঠুন ও শেরফানে রাদারফোর্ডকে ফিরিয়ে সিলেটের অবস্থা বেহাল করে ছাড়েন পেসার আল-আমিন হোসেন। পরের ওভারে আন্দ্রে ফ্লেচারকে এক রানে ফিরিয়ে স্কোরটা ৫ উইকেটে ৩৩ করে দেন ডেভিড ভিসে।
নাজমুল হোসেন মিলনকে নিয়ে ৭০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে ফেলার চেষ্টায় ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক সোহাগ গাজী। তুলে নেন ফিফটিও। তার ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল সিলেট, সমীকরণ নেমে আসে শেষ ২৪ বলে ৩৮ রানে।
কিন্তু ১৭তম ওভারে নিজের শেষ ছয় বল করতে এসে সব হিসাব পাল্টে দেন ম্যাচ সেরা মুজিব। প্রথম বলে মিলন, চতুর্থ বলে নাঈম হাসান ও পরের বলে সোহাগ গাজীকে ফিরিয়ে নিজের কোটার চার ওভার শেষ করেন মুজিব। এই ২৪ বলে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন আফগান স্পিনার। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৩১ বলে ৫২ করে আউট হন সোহাগ গাজী।
সোহাগ গাজী যখন ফিরছেন তখন সিলেটের সমীকরণ ছিল ১৯ বলে ৩৭। দশম উইকেটে লেজের দুই ব্যাটসম্যান মনির হোসেন ও আফগান নাভিন-উল-হক মিলে হিসাবটা শেষ ওভারে নামিয়ে আনেন ১৫ রানে।
আল-আমিনের করা প্রথম দুই বলে দুই চার হাঁকিয়ে চার বলে ব্যবধানটা ৭ রানে নামিয়ে আনেন নাভিন। তৃতীয় বলটিতে দুই রান নিতে গিয়ে হন রানআউট। সিলেটের তখন জিততে দরকার ৩ বলে ৬, উইকেটে শেষ ব্যাটসম্যান ইবাদত হোসেন।
চতুর্থ ও পঞ্চম বলে ৩ রান ওঠায় শেষ বলে আরও ৩ রানের দরকার ছিল সিলেটের। আল-আমিন সেই বলটা ওয়াইড দেয়ায় সমীকরণ দাঁড়ায় দুইয়ে। শেষ বলে মনির ও ইবাদত এক রান নিতে পারায় টাই ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করে সিলেট। মুজিব-উর-রহমানের করা সেই ওভারে রান ওঠে মাত্র ৭। জবাবে সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে ৪ বলেই দরকারি রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় কুমিল্লা।
৯ ম্যাচে চতুর্থ জয় তুলে ৮ পয়েন্টে শেষ চারের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখল কুমিল্লা। সমান ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে পড়ে থাকল সিলেট।