সিলেট থেকে: বারবার বল পায়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ঢুকে যাচ্ছেন জীবন-বিপলুরা। গোলের সুবর্ণ সুযোগ! জায়গামত একজন সতীর্থ থাকলেই গোলটা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে পাস দেয়া হবে, তাকে খুঁজতে খুঁজতেই ঘিরে ধরছেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা। তাতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আক্রমণের ধারও।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপে ফিলিপিন্সের কাছে ১-০ গোলে হারের ম্যাচে এমন দৃশ্যের দেখা মিলল বারবার। অতীতের পুরনো ভুত ‘ফিনিশিং সমস্যা’ এদিন যেন নতুন করে চেপে বসে তপু বর্মণের দলের কাঁধে।
অথচ শক্তিশালী ফিলিপিন্সের বিপক্ষে ম্যাচে একপ্রকার আধিপত্য বিস্তার করেই খেলেছে স্বাগতিকরা। নীচ থেকে বল নিয়ে মাঝ মাঠে খেলা গড়া। ছোট ছোট পাসিংয়ে ভালোই করেছেন সবাই। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের পায়ে বল যাওয়া মাত্রই বল কেড়ে নেয়াতেও মিলেছে চালাকির পরিচয়। কিন্তু লম্বা পাসেই যেন খেই হারিয়েছেন ফুটবলাররা। সঙ্গে ফিনিশিংয়ের সমস্যা তো আছেই। আর পুরো ম্যাচে দারুণ খেলা অধিনায়ক তপু বর্মণ কেবল একবারই ভুল করেছেন! তাতেই সর্বনাশ লাল-সবুজদের।
ফিলিপিন্স কোচ আন্দ্রেস গঞ্জালেজও স্বীকার করেছেন তার দলের চেয়ে যোগ্যতর দল হয়েও হেরেছে বাংলাদেশ। কোন জায়গায় তার দলের কাছে হেরে বসেছে স্বাগতিকরা? আন্দ্রেসের চোখে লাল-সবুজদের সমস্যাটা ‘ফাইনাল পাসে’।
‘আমার চোখে ওদের(বাংলাদেশ) সমস্যাটা ফাইনাল পাসে। খেলা ধরে রাখায় তারা বেশ দক্ষ। কিন্তু তাদের শিখতে হবে কোথায় শেষ মুহূর্তে পাসটা দিতে হবে। মাঝমাঠে তারা ভালো খেলেছে। নীচ থেকেও বল পায়ে দারুণভাবে সুযোগ তৈরি করেছে। ওদের ফাইনাল পাসটা ঠিকমত হলেই একটা গোল বের হয়ে যায়।’ বাংলাদেশের সমস্যার জায়গাটা এভাবেই সামনে এনেছেন ফিলিপিনো কোচ।
ফাইনাল পাস বলতে আসল সমস্যাটা যে ফিনিশিং সেটা আর বুঝিয়ে দেয়ার দরকার পড়ছে না। জেমি ডে যুক্তি দিতে পারতেন যে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচজন খেলোয়াড়কে বসিয়ে রাখাতেই হেরে বসেছে তার দল। কিন্তু বাংলাদেশ কোচ শিষ্যদের সমস্যাটা ভালো করে জানেন বলেই আর যুক্তিতর্কে যাননি হারের কারণ খুঁজতে। সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, গোলের সুযোগকে কাজে লাগাতে আরও কাজ করতে হবে তার দলকে।
‘আমার অ্যাটাকারদের গোলের জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা কিন্তু এ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে গোলের জন্য। এভাবে একটা সময় আমরা অবশ্যই গোলের দেখা পাবো নিশ্চিত। একজন কোচ হিসেবে এটাই আমার দায়িত্ব। ছয় থেকে আট মাস টানা কাজ করতে হবে। আর সামনে ঘরোয়া লিগ আছে। কে জানে হয়তো সেখানে আমরা একজন যোগ্য গোল স্কোরারকেও পেয়ে যেতে পারি!’
পাঁচজন খেলোয়াড়ের বিশ্রাম মেলায় এদিন মূল একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম। দলের নেতৃত্বের ভারও বর্তেছিল তার কাঁধে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে গা গরম করার সময় চোট পান তিনি। তাই শেষ মুহূর্তে দলকে সামলেছেন ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। গোল পেতে অভিজ্ঞদের অভাবও ভুগিয়েছে বেশ।
সেমিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হতে পারে প্যালেস্টাইন কিংবা তাজিকিস্তান। দৈহিক উচ্চতা, শারীরিক শক্তি, আর টেকনিকে যোজন যোজন এগিয়ে এ দুই দল। কক্সবাজারে সেমিফাইনালে নামার আগে আরও দুই দিন বিশ্রাম পাচ্ছে জেমি ডের দল। এই দুই দিনে নিজেদের সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারলে ভাল। নইলে দ্বিতীয় আসরের মতো তৃতীয় আসরেও ফাইনালে দর্শক হয়ে থাকতে হতে পারে লাল-সবুজদের।