৭ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো মহারণে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগ জিতে নিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচ হারলেও রিয়ালের স্বস্তি, ব্যবধান কেবল এক গোল।
বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হবে রিয়াল ও ম্যানসিটি। ম্যাচটি দিয়ে নির্ধারিত হয়ে যাবে ফাইনালে লিভারপুলের সঙ্গী কে হতে চলেছে।
বার্নাব্যুতে অপ্রতিরোধ্য রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে লিগ শিরোপা জিততে সিটিজেনরা কোনো অংশে কম এগিয়ে নেই ইংল্যান্ডে। বার্নাব্যু তাই ইউরোপ সেরার মঞ্চের জমজমাট এক নকআউটের অপেক্ষায়।
স্প্যানিশ লা লিগা চ্যাম্পিয়ন ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ দলের শিরোপার পথে প্রথমেই ছাপিয়ে যেতে হবে একে-অন্যকে। পেপ গার্দিওলার প্রত্যয়ী সিটির বিপক্ষে ইতিহাদে লড়বে দুর্দান্ত ধারাবাহিক কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে আগে সাতবার মুখোমুখি হয়েছে সিটি-রিয়াল। ২০১২-১৩ সালের পর প্রতিটি লড়াই হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে। লস ব্লাঙ্কোসদের বিপক্ষে শুরুর চারটি ম্যাচে (দুটি ড্র, দুটি হার) জয় না পেলেও পরের তিনটিতে জিতেছে ম্যানসিটি। ২০১৯-২০ আসরের শেষ ষোলোতে ওঠার লড়াইয়ে রিয়ালকে বিদায় করে দুটি লেগেই জিতেছিল গার্দিওলার দল। সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিল ইতিহাদে রিয়ালকে ৪-৩ গোলে হারানোর টাটকা স্মৃতি তো আছেই সিটির।
জয়ের হিসেবে এগিয়ে সিটি। পরিসংখ্যান, শক্তিমত্তা কিংবা নকআউটে খেলার অভিজ্ঞতা, সমীকরণ টানলে অবশ্য এসময়ে রিয়াল বা সিটি কেউ কারো থেকে কম নয়! রিয়ালের তিন স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা, রদ্রিগো ও ভিনিসিয়াস জুনিয়র যেমন দুর্দান্ত ফর্মে, নিজেদের শক্তিমত্তায় পুরো বিশ্বাস রাখছেন জ্যাক গ্রিলিশ, ফিল ফোডেন, গ্যাব্রিয়েল জেসাসরাও।
ইউরোপ সেরার মুকুট অর্জনের দিক থেকে অবশ্য যোজন এগিয়ে লস ব্লাঙ্কোস দল। সিটিজেনরা গতবার চেলসির কাছে শিরোপা হাতছাড়া করেছিল— চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে ইংলিশ ক্লাবটির সেরা অর্জন সেটাই। অন্যদিকে, এই মঞ্চে সর্বোচ্চ সফল দল মাদ্রিদ রাজারা, এপর্যন্ত ১৩ বার শিরোপা উদযাপনে মেতেছে স্প্যানিশ জায়ান্ট দলটি।
পিএসজি, চেলসিকে টপকে সেরা চারে আসা রিয়াল ইউরোপ সেরার মঞ্চে সিটির বিপক্ষে শেষ তিনবারের দেখায় একটিতেও জিততে পারেনি (দুটি ড্র, একটি হার)। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবের বিপক্ষে অ্যাওয়ে হিসেবে শেষ ছয়টি ম্যাচের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে ব্লাঙ্কোসরা।
কোচদের পরিসংখ্যানেও এগিয়ে সিটির গার্দিওলা। নিজেদের দেখায় আনচেলত্তির দুটি জয়ের বিপরীতে পাঁচটি জয় পেয়েছেন স্প্যানিয়ার্ড কোচ গার্দিওলা।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আনচেলত্তির প্রশংসায় ভাসাতে ভুল করেননি গার্দিওলা। ইউরোপের পাঁচ সেরা টুর্নামেন্টেই শিরোপা জেতার কীর্তি গড়া কোচের বন্দনা করেন এ স্প্যানিয়ার্ড।
‘আমি তার প্রশংসা করি, তিনি সারাবিশ্বে অসাধারণ দলগুলোকে কোচিং করিয়েছেন। এটা সবসময়ই অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন, ফুটবল সত্যিই অসাধারণ। তার একটা অংশ হল তিনি ব্যতিক্রমী একজন। তার সঙ্গে কয়েকবছর আগে দেখা করেছি এবং যতবারই দেখা হয়েছে, তিনি শান্ত ছিলেন। নিজের আবেগকে নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন।’
রিয়ালের বিপক্ষে জিততে মরিয়া গার্দিওলার ভাষ্য, ‘জানি না কী হতে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য জেতার চেষ্টা করা। এমন দলের বিরুদ্ধে আমরা ভালো করেছি এবং কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে উন্নতি করতে হবে।’
ম্যানচেস্টার সিটি প্রথম লেগে জোয়াও ক্যানসেলো এবং কাইল ওয়াকারকে খেলাতে পারেনি। একজন সাসপেনশনের কারণে এবং আরেকজন ইনজুরির কারণে বাইরে ছিলেন। দ্বিতীয় লেগে তারা ফিরতে পারেন।
‘ওয়াকার অনুশীলন করেছে। তার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। সে ফেরায় আমি খুশি। জোয়াও স্কোয়াডের বাইরে নেই। সে ভালো করছে। ম্যাচের দিন ঘুম থেকে ওঠার পর দেখব সে কেমন অনুভব করে। স্টোনস থাকছে না, সে প্রস্তুত নয়।’
ম্যাচের আগে রিয়াল কোচ আনচেলত্তি বলেছেন, ‘এটি বড় চ্যালেঞ্জ, কিন্তু আমরা ভালো আবহের মধ্যে আছি। লা লিগা জেতার পরে দলের আত্মবিশ্বাস দারুণ জায়গায় আছে। ম্যানসিটির মতো দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ খুব পাওয়া যায় না। আমরাও চেষ্টা করব, এমন একটা দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠতে। ঘরের মাঠে খেললেও এই ম্যাচটা খুব কঠিনই হতে চলেছে।’
‘শুরুতেই গোল তুলে নিতে পারলে ম্যাচের রাশ নিজেদের কাছে রাখা যায়। সেই ঝুঁকি আমাদের এবার নিতেই হবে। ঘরের মাঠে খেলার জন্য বাড়তি একটা সুবিধা পাবো। সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।’