প্রিয়জনের জন্য হীরার আংটির চেয়ে সুন্দর উপহার মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে এই উপহারটি আরও বেশি মূল্যবান এবং অর্থবহ করা সম্ভব। আর তার জন্য আংটিতে যোগ করতে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ এবং অনন্য সম্পদ – জীবনের মূল চিহ্ন – ডিএনএ।
সুইস রসায়নবিদ রবার্ট গ্রাস বিশেষ একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে ভালোবাসার মানুষের ডিএনএ যোগ করে গয়না বানানো সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবেই কাজটি করতে চান গ্রাস।
স্থিতিশীল অবস্থায় ডিএনএ সংরক্ষণ বিষয়ে গ্রাসের উদ্ভাবিত একটি নিজস্ব প্রযুক্তি রয়েছে। বিজ্ঞান সাময়িকী লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলাম আমাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি দিয়ে কী করা যায়। তখন আমাদের মনে হলো, ডিএনএ আমাদের সবার থেকে আলাদা এবং বিশেষ করে তোলে। আবার আমাদের ব্যবহৃত গয়নাও অন্যদের গয়না থেকে অনন্য ও বিশেষ হবে সেটাই আমরা চাই।’
তাই গয়নাকে সত্যিকার অর্থেই অনন্য করে তুলতে গয়নায় ডিএনএ যোগ করার বুদ্ধি গ্রাস ও তার টিমের মাথায় আসে।
গ্রাসের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে প্রথমে ক্রেতাকে নিজের থুতুর নমুনা সংগ্রহ করে (তুলোয় করে) সুইজারল্যান্ডে গ্রাসের ল্যাবে পাঠাতে হবে। সেখানে নমুনা প্রক্রিয়াজাত করে সেখান থেকে ডিএনএ আলাদা করে বিশুদ্ধ করা হয়।
বিশেষ ধরণের তরল দ্রবণে বিশুদ্ধ ডিএনএ রেখে তাতে কিছু রাসায়নিক যোগ করা হয়। এতে দ্রবণটি সাধারণ তাপমাত্রায় জমে কাচের সূক্ষ্ম গুঁড়োর মতো হয়ে যায়, যার ভেতর ডিএনএ সংরক্ষিত থাকবে চিরকালের মতো।
এরপর আংটি বা অন্য গয়নার গায়ে ফুটো করে সেই কাচের গুঁড়ো দিয়ে ভরে দেওয়া হয় এবং ফুটোটা বন্ধ করে দেওয়া হয় ০.০২ ক্যারেটের একটি নিখুঁত হীরা বসিয়ে। গ্রাস জানান, এই পদ্ধতিতে ডিএনএ নষ্ট হয় না। ফলে একে ভবিষ্যতে ব্যবহার বা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
প্রকল্পটির গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, স্বাভাবিক সংরক্ষণ পরিস্থিতিতে রাখলে এভাবে সংরক্ষিত ডিএনএ এক হাজার বছরে অর্ধেক ক্ষয় হবে।
গ্রাসের এই প্রকল্পটির নাম আইডেন্টিটি ইনসাইড, যার অধীনে রূপার আংটি, সুইস ঘড়ি এবং রোজ-গোল্ড লকেটের মধ্যে সংরক্ষিত ডিএনএ যুক্ত করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।