চারদিকে মানুষের মাঝে জীবন বাঁঁচানোর চেয়ে জীবিকার নিশ্চিয়তার তাগিদ বেশি। গত মার্চ মাস থেকে ঘর বন্দি মানুষ। কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কের কারণে সাময়িক কষ্টকে মেনে নিয়েছিল সকলে। কিন্তু এখন বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা নিয়ে শংকিত মানুষ। কারণ সঞ্চিত অর্থ বা সরকারি সাহায্য দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে জীবন চালানো সম্ভব নয়। অন্য দিকে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থায় দিনের পর দিন লকডাউন দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যেখানে উন্নত দেশগুলো কোভিড- ১৯ এর চিকিৎসা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে স্বাস্থ্যখাতের অপ্রতুল অবস্থায় করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটা বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিক বিষয় । তথাপি সীমাবদ্ধতাকে জয় করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সরকার। জনগনকে সচেতন করার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে নিয়েছে নানা পদক্ষেপ।
জীবন ও জীবিকা এখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। জীবন ছাড়া জীবিকার চিন্তা বাতুলতা মাত্র। আবার জীবন চালাতে প্রয়োজন জীবিকার৷ এ অবস্থায় সরকার সীমিত আকারে খুলছে সব কিছু। অন্যদিকে দেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও মৃত্যু হার বাড়াছে। মানুষের চিন্তা কিন্তু আর সীমিত শব্দটিতে সীমাবদ্ধ নেই। কারণ জীবিকার তাগিদে ৩১ মে থেকে ঘরের বাইরে যেতে হবে। কর্মক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে অর্থ সংকট কাটবে। কিন্তু নিজে কতটা সুস্থ থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। ঘন বসতির বাংলাদেশে নিয়ম মেনে সীমিতভাবে সব কিছু চলবে সে আশা ক্ষীণ। বিগত সময়ে লকডাউনের নিয়ম পালন হয়নি বলে প্রতিনিয়ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষ ঘরের বাইরে আছে। আর এখন সব কিছু খুলে দিলে সীমিতভাবে বিধি নিষেধে মেনে নিজেরা চলাচল করবে তেমন মানসিকতা তৈরি হয়নি মানুষের। তাই আগামী দিনে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সামাল দিতে সরকার কতটা প্রস্তুত তা এক অজানা প্রশ্ন।
সাম্প্রতিক কালে চট্টগ্রামে এ ভাইরাসের আক্রমণকে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ কিন্তু কেন এ পরিস্থিতি তা খতিয়ে দেখছে না কেউ। সেখানে রোগী নিয়ে স্বজনদের আহজারির অন্ত নেই। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাতে রয়েছে নানা সংকট। গার্মেন্টস কল কারখানা খুলে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশ। ১৭ কোটি মানুষের জন্য জীবনের চেয়ে জীবিকায়ই বেশি দরকার এটা এখন প্রমাণিত।
সময়ের সাথে প্রতিকূল পরিবেশে টিকিয়ে থাকার লড়াই করা মানুষের স্বভাব। তবে এ অদৃশ্য ভাইরাসকে প্রতিরোধ করাটা অনেকটাই দুস্কর হয়ে পড়েছে মানুষের জন্য। কারণ এর হিংস্র থাবায় স্তব্ধ হয়ে গেছে জনজীবন। তাই বাঁচা মরারকে নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়ে প্রত্যেকে নিজের মত করে লড়তে হবে কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে। নিজে সচেতন না হলে এর আক্রমণের শিকার হতে হবে। নীরবে ছড়িয়ে যাচ্ছে এ ভাইরাস ক্রমশ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সীমিত শব্দটির যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্র এখানে নেই বললে চলে। দেশের মানুষের জীবন যাত্রায় কোভিড- ১৯ কে প্রতিরোধ করার জন্য যে ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা হয়নি এখনো । অফিস আদালত,গণ পরিবহনে সরকারের নির্দেশনা পালন সম্ভব হবে, যদি মানুষ নিজের জীবনকে গ্রাহ্য করে। আজ জনগণ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তা থেকে ভাবতে হবে, নিজের ও পরিবারের কথা। কোভিড-১৯ ব্যক্তি থেকে পরিবার ও অন্যদেরকে সংক্রমিত করে। আর আপন জন হারানোর বেদনা বড় যন্ত্রনাময়। তাই জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে নিজেকে সচেতন থাকতে হবে সবার আগে।
৮৩ তম দিনে সরকারি হিসাবে আক্রান্ত হয়েছে ২৫২৩ জন। এ হিসাব সাধারণ ছুটিকালিন সময়ের। আর ৩১ মে সব খোলার পর সীমিত ভাবে শব্দটি যে হারিয়ে যাবে তা অনুমান করা যায় ফেরিঘাটের দৃশ্যে। সরকার জনজীবনে মৌলিক চাহিদাকে পূরণ করতে সদা সচেষ্ট। তবে এ ক্ষেত্রে জনগনকে ও ভাবতে হবে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে। তা না হলে সীমিতভাবে স্বাভাবিক জীবনে অসহায় হবে জনগণ। করোনাভাইরাস শুধু কোন অসুখ নয়। এটি মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে। নতুন করে বাঁচার যে শিক্ষা দিচ্ছে কোভিড- ১৯ তা মানতে হবে সকলকে। তাই ‘সীমিত পরিসরে’ চালু হওয়া জীবনযাত্রায় পুরোপুরি নিয়ম মেনে চলাকে অভ্যাসে রপ্ত করতে হবে ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)