নেদাররল্যান্ডস সফর নিয়ে কথা বলতে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও প্রশ্ন-উত্তর পর্বে সফরের বাইরেও নানা বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাঠকের জন্য সেসব প্রশ্ন ও তার উত্তর তুলে ধরা হলো।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেদারল্যান্ডস সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এর পরই শুরু হয় প্রশ্ন-উত্তর পর্ব।
এশিয়ান টিভির বার্তা উপদেষ্টা মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, বিদেশীরা বলছে, বাংলাদেশ এখন অনিরাপদ। এই অনিরাপদ উদ্বেগ কাটানোর জন্য সরকার কি করছে?
উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কোনোভাবে অনিরাপদ করতে পারলেই এখানে হামলা চালানো যায়। কিন্তু সেটা বাংলাদেশে হবে না। নিউইয়র্কে আওয়ামীগ নেতাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ফ্লোরিডায় মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে। কেন এই প্রবাসীকে সেখানে হত্যা করা হলো, সে প্রশ্ন কি আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে কেউ করতে পারবেন?
শেখ হাসিনা বলেন, এখন সাম্প্রতিক বিদেশী হত্যা নিয়ে কেউ বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে যদি প্রশ্ন তোলে; তবে, এ দেশে আইএস আছে বলে প্রমাণ করতে যারা চক্রান্ত করছে তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলা হবে। বাংলাদেশের কেউ কি এটি প্রমাণ করতে চান? বাংলাদেশ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ দেশ, কোনোভাবেই অনিরাপদ নয়।
যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বাংলাদেশকে অনিরাপদ প্রমাণের জন্য অনেকে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে এবং বাংলাদেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য অর্থ দিচ্ছে। এই অর্থের উৎস বন্ধে সরকার কি করছে?
মঞ্জুরুল ইসলামের দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ মেরে যখন উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি, তখন এবার গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। এদেশে আইএস আছে বলে প্রমাণের চেষ্টা চলছে। যদি তা প্রমাণ করা যায়, তাহলে কী হবে সেটা আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়ার কথা ভাবলেই হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে দেশের একটি গোষ্ঠীও এ চক্রান্তে লিপ্ত। দেশবাসী যদি সচেতন না হোন তাহলে সর্বনাশ।
খালেদা জিয়া জাতীয় সংলাপের আহবান জানিয়েছেন। তার আহবানের প্রতিক্রিয়া জানতে চান চ্যানেল ২৪’র নিউজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান রাহুল রাহা।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয় নাই সংলাপে বসতে হবে। একটা খুনির সাথে বসতে হবে। ওনার (খালেদা জিয়া) সাথে পোড়া গন্ধ। এরকম খুনির সাথে সংলাপে বসার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া সংলাপে বসার যোগ্যতা তখনই অর্জন করবেন; যখন বলবেন, এদেশে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে।
দৈনিক জনকণ্ঠের উত্তম চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, খালেদা জিয়ার বলেছেন, জাতীয় সংলাপ হলেই বাংলাদেশের বতর্মান সংকট কেটে যাবে। তাহলে এর সাথে কি সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের কোনো যোগসূত্র আছে?
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই আহবানই প্রমাণ করে দেশের সব খুনের সাথে তার যোগসূত্র আছে।
এটিএন বাংলার চিফ এক্সিকিউটিভ এডিটর জ. ই. মামুন প্রশ্ন করেন, সন্ত্রাসীরা খুনের যে তালিকা করেছে সেখানে লেখক, সাংবাদিকসহ অনেকে নাম আছে। তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের নিরাপত্তার জন্য সরকার কি করছে?
জবাবে তিনি বলেন, সব তালিকার শীর্ষে আছি আমি। সবার নিরাপত্তার জন্য জন্য আমরা সব করছি। নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের যা যা করা দরকার আমরা তাই করছি এবং সব ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এটিএন নিউজের চিফ রিপোর্টার মাকসুদুল হাসান প্রশ্ন করেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মন্তব্য নিয়ে সরকারের অবস্থান কি?
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কেউ কোনো ধরনের মন্তব্য করলে তা সহ্য করা হবে না। আমরা অ্যামনেস্টির মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছি।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুলতানা রহমান প্রশ্ন করেন, ব্লগার ও লেখক হত্যার মতো ঘটনার কোনো বিচার শুরু হয়েছে কিনা?
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, খুনির বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সব হত্যার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং সবগুলোরই বিচার হবে।