সারাদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পরীক্ষায় যত জায়গায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত বলে জানিয়েছেন (দুর্নীতি দমন কমিশন) দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে বিজিপ্রেসের কিছু অসাধু কর্মচারী জড়িত। শিক্ষকরাও কোচিং সেন্টার পরিচালনার নামে ফাঁসকাণ্ডে জড়িত থাকেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষাখাতে দুর্নীতি রোধে কাজ করছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়গুলো আলোচিত হয়। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার স্তরে স্তরে দুর্নীতি এবং এসব দুর্নীতি নির্মূলে দুদকের পক্ষ থেকে বৈঠকে ৩৯ টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানে প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর অসহায়ত্বও প্রকাশ পায় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। যদিও এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা ‘গুজব’ বলে আখ্যা করেছিলেন। এমনকি ওই কথিত গুজব রোধে আইনী পদক্ষেপের সাবধানতাও জারি হয়েছে। এ অবস্থা অনেকবছর ধরে চলে আসছে। অথচ দেশের এমন একটি পাবলিক পরীক্ষা নেই, যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার অভিযোগ ছিল না। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ও কয়েকটি জেলার বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বেশ আলোচিত হয়েছে। কোচিং সেন্টার, নোট বই আর নানা নামে পাবলিক পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষাখাতের বিষফোঁড়া এই প্রশ্নপত্র ফাঁস মারাত্মক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ঘন ঘন পরীক্ষার চাপ থেকেই এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের উৎপাত আর বিপুল বাণিজ্যের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর অবস্থান নিতে হবে বলে আমরা মনে করি। এছাড়া অভিভাবক মহলের মধ্যে যে অলীক প্রাপ্তির প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে শিক্ষাবিদ, মনোবিদ আর সমাজ বিজ্ঞানীদের সাহায্যও নেয়া যেতে পারে। কারণ যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে বা অভিযুক্ত, তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তো টাকার বিনিময়ে অভিভাবকদেরই দিচ্ছেন। আর অভিভাবকরাও সেই প্রশ্ন হাতে পেয়ে নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিজ হাতে ধ্বংস করছেন। বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশকে আমলে এনে সরকারের কঠোর বিচারিক পদক্ষেপ ও জনসচেতনতায় এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের মুক্তি দেবে বলে আমাদের আশাবাদ।