জরা বার্ধক্য মানুষের জীবনে এক চরম সত্য অধ্যায়। শৈশবের সোনালী দিন, তারুণের আর যৌবনের রোদেলা দুপুর পাড়ি দিয়ে, মাঝ বয়সে ব্যস্ত বিকেলটাও অস্তমিত হয় এক সময়। তখনই জীবন সায়াহ্নে নেমে আসে বার্ধক্য। নেহাত মৃত্যু না হলে এই মুহূর্তটি সবাইকেই ভোগ করতে হয় বা হবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানিদের তথ্যমতে, বয়সটা যখন প্রবীণের কাতারে চলে যায় তখন মস্তিস্কটা ছোট হয়ে আসে। ফলে স্মৃতি শক্তি কমে যায়, আবেগ অনুভূতি, বিচার বুদ্ধি, বিবেচনা শক্তি, চিন্তাক্ষমতা, কাজ করার ক্ষমতা ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটে। সবাই অনেকটা হয়ে যান শিশুর মতো। এই সময় যদি জীবনসঙ্গীও চলে যান তাহলে ভর করে নি:সঙ্গ এক বিরক্তিকর জীবন।
আসলে একজন মানুষ যখন জীবন সায়াহ্নে চলে যায় তখন তার মধ্যে কিছু জিনিস দানা বাঁধে। যেমন শারীরিক অসামর্থ্য, অসহায়ত্ব, অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা ইত্যাদি। এগুলো থেকে মানসিক যন্ত্রনা শুরু হয় এবং নিজেকে পরিবারের বোঝা ভাবতে শুরু করেন। অনেক সময় এমন আচরণ করে বসেন যা শিশুকের হার মানায়। তিনি যাতে নিজেকে পরিবারের বোঝা না ভাবেন এই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে পরিবারকেই।
আজকে যারা জীবন সায়াহ্নে তারা পরিবার, সমাজ, দেশের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। যারা এখন যৌবনে আছে তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, সবারই একদিন এই অবস্থায় যেতে হবে। আজ তারা অবহেলার শিকার হন, তাহলে সবাইকেই ওই সময়ে অবহেলার শিকার হতে হবে। যেহেতু এই সময় তারা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায় পরিবারের অন্যদের ওপরই তাদের নির্ভর করে চলতে হয়।
অনেক পরিবারেই দেখা যায় তাদের নানা দাবি বা কথাবার্তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়। আর তখন তিনি অসম্মানিত বোধ করেন। যা একটি পরিবার তথা সমাজের জন্য খুবই নেতিবাচক একটা দিক।
আগেই বলেছি জীবন সায়াহ্নে এসে তারা শিশুর মতো হয়ে যান। শিশু যেমন কথা বলা শুরুর সময় সারাদিন বকবক করতে থাকে তেমনি তারাও এই রকম করতে থাকেন। এই সময় আমাদের বিরক্ত হওয়া উচিত হবে না, তাদের সঙ্গ দিতে হবে। যেকোন প্রয়োজনে পাশে থাকতে হবে। আর সেই পদক্ষেপটা সফলভাবে নিতে পারে একমাত্র তার পরিবার। কারণ জীবন সায়াহ্নের ভারে ভারাক্রান্ত মানুষটিকে একমাত্র তার পরিবার যতটুকু বুঝতে পারবে অন্য কেউই পারবে না।
তাই তাদের সাথে কথা বলা উচিত প্রাণখুলে। তখন যদি স্বজনরা পাশে না থাকেন তাহলে কখন থাকবেন? বয়স্কদের ঢিল মেরে ছুঁড়ে না ফেলে তাদেরকে বুকে টেনে নিতে হবে। তাদের বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠিয়ে পরিবারের সাথে রাখা উচিত। পরিবারের যিনি কর্তা তার উচিত পরিবারের প্রবীণ সাথে ভালো ব্যবহার করা, সম্মান দিয়ে কথা বলা। কর্তার দেখাদেখি পরিবারের অন্যান্যরাও ভালো ব্যবহার করবে। বয়সের ভারে প্রবীণ হয়ে ওঠা ওইসব পরিবারের সদস্যরাতো এই বয়সে আর কিছু চাননা, তারা চান একটু যত্ন, ভালোবাসা আর সম্মান। এর বেশি তো আর কিছু নয়! এটুকুতো আমরা দিতেই পারি।
এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)