প্রথম দফায় ১০,৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রোববার সকালে সচিবালয় সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনের ৬ তলায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রাজাকারদের এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেন: ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি না।’
বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় থাকার সময় অনেক রাজাকারের রেকর্ড সরিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন: ‘নতুন নয়, ১৯৭১ সালের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে দ্বিতীয় ধাপে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকারদের অপকর্ম জানাতে নাম প্রকাশের এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার যে তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী প্রকাশ করবেন তা নতুন কিছু নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অতীতের সংগ্রহ করা একাত্তরের রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা ভাতা নিয়েছে বা যাদের নামে অস্ত্র এসেছে, তাদের নাম-পরিচয়, ভূমিকাসহ যেসব তথ্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল সেই তথ্য ধরে করা তালিকাই যাচাই-বাছাই করে আবার প্রকাশ করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য ঘাতক বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তথ্যানুযায়ী, একাত্তরের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা দিতে গঠিত হয় রাজাকার বাহিনী। খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থি কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। পরে দেশের অন্যান্য অংশেও গড়ে তোলা হয় এই বাহিনী। একাত্তরের ১ জুন পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশবলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়। এর সংখ্যা ছিল অন্তত ৫০ হাজার।
এ ছাড়াও পাকিস্তান সরকার বাঙালি নিধনে একইভাবে আলবদর ও আলশামস বাহিনীও গঠন করে। তখন গ্রামগঞ্জে মেম্বারদের রাজাকার বাহিনীতে লোক সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ওলামাসহ পাকিস্তানের সমর্থক অনেক দলের নেতাকর্মীরা রাজাকারসহ অন্যান্য বাহিনীতে যোগ দেয়। তবে স্বাধীনতাবিরোধী এই বাহিনীগুলো সাধারণ অর্থে রাজাকার হিসেবেই পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার পর থেকেই এসব বাহিনীর তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের দাবি ওঠে। অবশেষে স্বাধীনতার ৪৯ বছরে এসে সেই দাবি বাস্তবায়নের পথে সরকারিভাবে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে। তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৪ সালে।