করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ক্ষতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে যেসব ব্যাংক সহযোগিতা করবে না; সেসব ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেয়ার প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
শনিবার ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
তিনি বলেন, সরকারের বিশেষ প্যাকেজ বাস্তবায়নে অর্থাৎ ঋণ প্রদানে অনেক ব্যাংক এগিয়ে এলেও কিছু ব্যাংকের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক প্যাকেজ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে না; সেসব ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেয়ার প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি যেসব ব্যাংক এ কাজে সহযোগিতা করছে তাদের ট্যাক্সের সুবিধা দেয়া ও আমানত বাড়িয়ে দেয়া যায় কিনা তা বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে সহযোগিতাকারি ব্যাংকগুলোকে ১ শতাংশ কর মওকুফ করা যায় কি না তা বিবেচনা করা দরকার। এ বিষয়ে শিগগিরই অর্থমন্ত্রী বরাবর চিঠি পাঠানো হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করছে না। এসএমই খাতে ব্যাংকগুলোর অনীহা দেখা যাচ্ছে। অনেক ব্যাংক বলছে, এ খাতে ঋণ দিলে খরচ বেশি। এটা আসলে ঠিক নয়। এ প্যাকেজ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো সমস্যা থাকলে তার সমাধান করতে হবে।
সিএমএসএমই খাতকে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে প্রায় ৮৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির অংশ। গত ১০ বছরে অনেকগুলো ব্যাংক এসেছে। তাদের বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে নিয়ে আশা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কাছে যেতে পারিনি। আবার এ খাতের উদ্যোক্তারাও ব্যাংকিং চ্যানেলে যায় না। কারণ তারা বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে ক্রয় করে পণ্য বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করেন। তাদের ব্যাংকে যেতে হয় না। যে কারণে বড় একটা অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক রয়ে গেছে।
এখন সময় এসেছে দেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক রয়েছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক আকারে নিয়ে আসা- এমন মন্তব্য করে শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, আগামী তিন বছরে এ কাজ করতে হবে। তবে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ দিতে হবে। এ খাতে এখন খরচ বেশি হলেও আগামীতে গ্রাহক বাড়লে খরচ কমে যাবে। এ জন্য সিএমএসএমইতে আমরা বেশি জোর দিচ্ছি।
বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ঋণ প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ করেন তিনি।
করোনায় ভেঙ্গে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। তাই এই পরিস্থিতির উন্নয়নে ক্ষতিগ্রস্ত ছোটবড় ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাবে বড় শিল্প খাত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত পাবে ২০ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের সুদ ৯ শতাংশ হিসাব করা হলেও ঋণগ্রহীতাদের দিতে হবে গড়ে অর্ধেক সুদ। বাকি অর্ধেক সুদের অর্থ সরকার ভর্তুকি আকারে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে।