রাখাইনে জাতিগত নিধনের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক চাপে আছে মিয়ানমার। আরও বেশি চাপে আছেন মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চি। বাংলাদেশের কূটনৈতিক দক্ষতা আর বিশ্ব নেতাদের চাপে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে সমঝোতা স্মারক সাক্ষর করেছে মিয়ানমার। এই অব্যাহত চাপের মধ্যে সেখানে এসেছেন ভ্যাটিকান সিটির পোপ ফ্রান্সিস। মিয়ানমারে পৌঁছে রোমান ক্যাথলিকদের এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা অং সান সু চি এবং রোহিঙ্গা সংকটের মূল খলনায়ক বর্মী সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এরপর নিজের বক্তৃতায় দেশটির সব নৃগোষ্ঠীর জন্য শ্রদ্ধার দাবি জানান তিনি। পোপ ফ্রান্সিস বলেন, মিয়ানমারের ভবিষ্যত নিশ্চয়ই শান্তির হবে। আর সেই শান্তি হবে সমাজের প্রতিটি সদস্যের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি সম্মানের ভিত্তিতে, প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর এবং তাদের পরিচিতির প্রতি সম্মানের ভিত্তিতে, আইনের শাসনের প্রতি সম্মানের ভিত্তিতে এবং সেই গণতান্ত্রিক নিয়ম যা প্রতিটি ব্যক্তি ও দলের জন্য প্রযোজ্য তাদের প্রতি সম্মানের ভিত্তিতে। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় সম্পদ জনগণ। তারা অনেক কষ্ট ভোগ করেছে, এখনও করছে। নাগরিক সংঘাত ও যুদ্ধ বহুদিন ব্যাপী চলমান ছিলো এখানে এবং সেটা গভীর বিভক্তি তৈরি করেছে। যেহেতু দেশটি এখন আবার শান্তি পুনঃস্থাপন করতে চাইছে, তাই সেই সব ক্ষত সারানো মূল কাজ হওয়া উচিত। ধর্মীয় ভিন্নতা কখনো বিভক্তি বা অবিশ্বাসের উৎস হতে পারে না। আমরা পোপ ফ্রান্সিসের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আমরাও বলতে চাই, ধর্মীয় ভিন্নতা কখনো বিভক্তি বা অবিশ্বাসের উৎস হতে পারে না। সেটা মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশ, অথবা বিশ্বের যেকোন জায়গায় তা হোক না কেন। পোপের সঙ্গে অং সান সু চির বক্তব্যেও অবশেষে একই সুর লক্ষ্য করা গেছে। পোপ ফ্রান্সিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে মিয়ানমার এই অহিংস বাণীর পথে ফিরে আসবে বলে আমরা আশা করি। তাহলে রোহিঙ্গা সংকটের মতো একটি মানবিক বিপর্যয় থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি।