‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, “আমি দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকি যাতে মানুষকে দুর্ভিক্ষ দেখতে না হয়। কিন্তু রুচির যে দুর্ভিক্ষ চলছে তা দূর হবে কীসে?” তা দূর হবে সংস্কৃতি চর্চায়, নাট্যচর্চায়।’ বললেন লিয়াকত আলী লাকী। আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি তিনি।
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান, নাট্যজন আতাউর রহমান, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক ও সারাদেশ থেকে আসা নাট্যকর্মীরা।
এবারের প্রতিপাদ্য ‘মানবের দেশে আমার, দানব নাহি রবে’। দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘দেশের অগ্রযাত্রায় নাট্যচর্চা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে একদিন ক্যানসার থাকবে না, ডাইবেটিকস থাকবে না। কিন্তু মনের ক্যানসার দূর করার মাধ্যম হলো সংস্কৃতি। মনের ক্লেদ দূর করার মাধ্যম নাটক। বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যতত্ব পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীরা যেন জিপিএ-৫ এর দৌড়াত্বের মাঝেও সুস্থ মননে বিকশিত হতে পারে, সে জন্য উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নাট্যচর্চা পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী।’
মফিদুল হক বলেন, ‘নাট্যকর্মীদের দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে হবে এবং শিল্পের শক্তিতে উগ্রবাদকে মোকাবেলা করতে হবে।’
আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো নাটককে পেশাদারিত্বে রূপ দিতে পারিনি। শিল্পচর্চায় পেশাদারিত্ব যুক্ত হলে শিল্পের মান বৃদ্ধি পায়। আমার বিশ্বাস একদিন দেশের কর্তাব্যক্তিরা বুঝবেন এবং নাট্যচর্চাকে পেশাদারিত্বে রূপ দেবেন।’
লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘আমরা নাটকে যাদের গড়ে তুলছি, তাদের মধ্যে কজন আর মূল নাট্যধারায় সম্পৃক্ত থাকছে? ২০১২ সালে নাট্যচর্চাকে পেশাভিত্তিক চর্চায় রূপ দিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়েও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নির্দেশনা গিয়েছিল। কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনি। এবার এই দাবিকে আমরা আন্দোলনে রূপ দেব।’
দুইদিনব্যাপী সম্মেলনে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছেন। এ সম্মেলন নাট্যকর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করবে বলে মনে করছেন অংশগ্রহণকারীরা। নাট্যকর্মী ইকবাল বলেন, ‘আমরা যাদের গুরু মনে করি, তাদের সান্নিধ্য পাওয়ার বড় সুযোগ এই সম্মেলন। তাদের সংগ্রাম, চিন্তাভাবনা আমাদের এগিয়ে নেবে।’
আগামীকাল শনিবার নাট্যকর্মীদের নিয়ে গাজীপুর, হোতাপাড়া খতিববাড়ীতে দিনব্যাপী থিয়েটার ক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছে।