শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের নায়িকা সুপ্রিয়া দেবী।
অভিনেত্রীর বাইরে সুপ্রিয়া দেবীর আরেকটি পরিচয় তিনি ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তম কুমারের জীবনসঙ্গী ছিলেন। প্রথম স্বামী বিশ্বনাথ চৌধুরীর সঙ্গে সংসার ছেড়ে সুপ্রিয়া জীবন শুরু করেছিলেন সে সময়কার সর্বাধিক জনপ্রিয় নায়ক উত্তম কুমারের সাথে। উত্তমের প্রয়াণের পর আর সংসারও করেননি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উত্তমের স্মৃতি বুকে আগলে বেঁচে ছিলেন।
অনেকের ধারনা ছিল, চলচ্চিত্রাঙ্গনে এসেই দুইজনের পরিচয় হয়। কিন্তু সে ভুল বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ভেঙেছেন সুপ্রিয়া নিজেই। মায়ানমারের জন্ম নেয়া সুপ্রিয়া, পরিবারসহ কলকাতায় আসার পর একই পাড়ার প্রতিবেশী ছিলেন উত্তমের। ১১ বছর বয়সেই পরিচয় হয়েছিল উত্তমের সঙ্গে। মাঝে অনেক দিনের যোগাযোগ না থাকলেও পরবর্তীতে অভিনয়ে আসার পর নতুন করে সখ্যতা বাড়ে উত্তম কুমারের সঙ্গে।
তবে, সুপ্রিয়া দেবী বেঁচে ছিলেন তাঁর নিজ পরিচয়ে, শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবেই। সুপ্রিয়া দেবীকে সবাই একনামে চিনে গেছেন তাঁর নিজ মেধার পরিচয়ে। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে সিনেমা করলেও অভিনয়ে এসেছিলেন প্রথম স্বামী বিশ্বনাথ চৌধুরীর অনুপ্রেরণাতেই।
সুপ্রিয়া দেবীর প্রথম চলচ্চিত্র ‘বসু পরিবার’। ১৯৫২ সালে নির্মিত এই চলচ্চিত্রের পর বাঙালি দর্শক তাঁকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পেয়েছেন প্রায় ৪৫ টি চলচ্চিত্রে। পাঁচ দশকের অভিনয় জীবনে সুপ্রিয়া দর্শকের মনে বহুবার দাগ কেটেছেন তাঁর অভিনয় দক্ষতা দিয়েই।
বাঙালি মনে রেখেছে ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নিতাকে, নিতার ‘দাদা, আমি বাঁচতে চাই’ সংলাপকে। বাঙালি দর্শক তাঁকে চিনেছে ‘দুই পুরুষ’ এর বিমলা হিসেবে, ‘দেবদাস’ এর চন্দ্রমুখী হিসেবে কিংবা ‘বন পলাশীর পদাবলী’র পদ্মা হিসেবে।
উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়সহ বাংলার প্রায় সব বিখ্যাত নায়কের সাথে জুটি বেঁধে দাপটের সঙ্গে একসময় পর্দা কাঁপিয়ে গেছেন সুপ্রিয়া দেবী। উত্তম কুমারের সঙ্গে তিনি ‘সোনার হরিণ’, ‘শুন বরনারী’, ‘উত্তরায়ন’, ‘সূর্য্যশিখা’, ‘সবরমতী’, ‘মন নিয়ে’, ‘চৌরঙ্গী’ সহ আরও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
২০১৪ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’তে ভূষিত করেন। এছাড়া তিনি সম্মানিত হয়েছেন ‘বঙ্গভূষণ’ উপাধিতে।