নব্বই দশকের শুরু থেকেই জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে দফায় দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বেসরকারি হিসেবে সেই সংখ্যা প্রায় চার লাখ। সম্প্রতি সেখানে এসে যোগ হয়েছে আরো প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। নতুন করে বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গাদের খাবার, থাকার জায়গা ও পোশাক দিয়ে সহায়তা করছে আগে আসা রোহিঙ্গারা এবং স্থানীয় জনগণ।
১৯৯২ সালে নাসিমা খাতুন যখন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন তখন তার বয়স ১০। বর্তমানে সন্তানের জননী এই নারী কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় একটি পাত্রে খাবার রান্না করেন শুধুমাত্র নতুন আসা শরণার্থীদের খাওয়ানোর জন্য। আরও পাঁচজন নারীর সঙ্গে মিলে ৪ থেকে ৫শ’ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে খাওয়ান তিনি।
নাসিমা খাতুন বলেন, বিশ বছর আগে আমরা এসেছি। আমাদেরই মতো আরও কিছু মানুষের সমস্যায় আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাদের জন্য আমাদের অবশ্যই কিছু করা উচিত।
একটি বড় স্বেচ্ছাসেবক দলের অংশ নাসিমা। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা, ইউএনএইচসিআর, ইউএন রিফিউজি এজেন্সির সঙ্গে মিলে কাজ করছেন। একইভাবে কাজ করছিলেন ইশতিয়াক আহমেদও।
অগাস্টের ২৪ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা এসেছে বাংলাদেশে। তাদের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ সাতাশি হাজার রোহিঙ্গার কেউ কেউ ক্যাম্পে আবার কেউ রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন।
দুর্গম পথে সপ্তাহের পর সপ্তাহ হেঁটে বৃষ্টিতে ভুগে পায়ের ক্ষত, ক্লান্তি ও দুর্বলতা নিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। জীবন-মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণে তাদের সেবা দিতে ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে প্রবল আগ্রহ নিয়ে কাজ করছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।
১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্বামীহারা গর্ভবতী নারী, বয়স্ক নারী ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শিশুদের সেবা দেওয়া। আমরা এই জীবন যাপন করেছি। তাই সারাদিন না খেয়ে থাকার কষ্টটা আমরা বুঝি।
স্থানীয়রাও ব্যক্তিগতভাবে ক্যাম্প ম্যানেজারের কাছে চাল, ডাল, সবজি, তেল ও আলুসহ বিভিন্ন খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। পরে প্রয়োজন অনুসারে সেসব ক্যাম্পে থাকা এসব খাবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণ করছে স্বেচ্ছাসেবকরা।