অভিযোগ ওঠার পর থেকেই ধর্ষণের কথা অস্বীকার করছেন ক্রিস্টিয়ানে রোনালদো। এমনকি যে সংবাদমাধ্যম এই খবর প্রথম প্রকাশ করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান। এবার তার বিরুদ্ধে এমন এক প্রমাণ হাজির করা হয়েছে যে, সিআর সেভেনের আদৌ আরকিছু বলার থাকবে কিনা তাতেই থাকছে সন্দেহ!
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মডেল ক্যাথরিন মায়োরগাকে ধর্ষণ করার পর মুখ বন্ধ করতে বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে যে গোপন চুক্তিপত্র করেছিলেন রোনালদো; এবার সেটি ফাঁস করে দিয়েছে সেই জার্মান পত্রিকা ডার স্পিগেল।
জার্মান গণমাধ্যমটিতে দেয়া এক সাক্ষাতকারেই পর্তুগিজ সুপারস্টারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন মায়োরগা। রোনালদো প্রথমে এসব অভিযোগ হেসে উড়িয়ে দিলেও পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার টুইট করে অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার আগেই লাস ভেগাস পুলিশ নতুন করে ঘটনাটির তদন্তে নেমেছে। গণমাধ্যমকে পুলিশ জানিয়েছে, তারা ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে জুভেন্টাস তারকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়।
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের হোটেলে ক্যাথরিন মায়োরগা নামে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগে সিআর সেভেন এখন বিপাকে। মায়োরগা কয়েকদিন আগেই দুঃখপ্রকাশ করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি তদন্তের দাবি জানান।
মডেলের দাবি, ২০০৯ সালে লাস ভেগাসের একটি অ্যাপার্টমেন্টে তাকে নিয়ে যান রোনালদো। মায়োরগা যখন পোশাক বদলাচ্ছিলেন তখন পিছন থেকে হঠাৎ তাকে জাপটে ধরেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
মায়োরগার দাবি, বারবার তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। সেটি সত্ত্বেও জোর করে সঙ্গম করেন সিআর সেভেন। মার্কিন মডেল আদালতে যে নথি পেশ করেছিলেন সেই নথি অনুযায়ী, ধর্ষণের পর নাকি তার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন রোনালদো।
ওই নারীর দাবি, এরপর রোনালদোর চোখেমুখে অপরাধবোধ ফুটে উঠেছিল। বারবার ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। এমনকি নতজানু হয়ে ঘটনা প্রকাশ্যে না আনার জন্য অনুরোধও করেন। অভিযোগ দাখিলের পর রোনালদোর পক্ষ থেকে আপোষের প্রস্তাব আসে। পৌনে ৪ লাখ ডলারের আপোষ হয়। কিন্তু ৯ বছর পর সম্প্রতি ‘মি টু’ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেই আপোষ ভেঙে ফেলেছেন মায়োরগা।
ক্যাথরিনের দাবি, সেসময় শারীরিক সম্পর্কের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছিলেন রোনালদো। সেসময় ওই মডেলের সঙ্গে রোনালদোর বেশকিছু ছবিও ভাইরাল হয়।
ক্যাথরিনের আইনজীবী দাবি করেছেন, যে আর্থিক চুক্তি হয়েছিল তার শর্তপূরণ করা হয়নি। তাছাড়া তার মক্কেলের সেই শারীরিক সম্পর্কের জন্য প্রচুর শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণেই তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
সেই গোপন আপোষনামার একটি কপি ছিল মায়োরগার কাছে। ডার স্পিগেলের মাধ্যমে সেটি এবার প্রকাশ্যে আনলেন তিনি। ওই চুক্তিপত্রের নিচে মায়োরগা এবং রোনালদোর সাক্ষর আছে। যদিও এতে রোনালদোর ছদ্মনাম(টফার) এবং মায়োরগার ছদ্মনাম(মিসেস সি) ব্যবহার করা হয়েছে। চুক্তিপত্র প্রকাশ করে ডার স্পিগেল জানিয়েছে, ‘এই নথির সত্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রোনালদোর আইনজীবীর পক্ষ থেকেও কোনো আপত্তি করা হয়নি।’
রোনালদোকে নিয়ে জটিলতা ক্রমশই বাড়ছে। ধর্ষণ অভিযোগ ওঠার পর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন। দেশের হয়ে আগামী দু’ম্যাচে দলে থাকবেন না তাদের পোস্টারবয়। এই অবস্থায় স্পন্সরও হারাতে পারেন রোনালদো। সব মিলিয়ে পর্তুগিজ সুপারস্টারের জীবনে টেনশনের স্রোত। মিডিয়ার দাবি, রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে পারে তার প্রধান দুই স্পন্সর নাইকি ও ইএ স্পোর্টস।
তবে কঠিন সময় রোনালদোর পাশে দাঁড়িয়েছেন বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ, দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনিও কোস্তা, পর্তুগিজ জাতীয় দলের কোচ ফার্নান্ডো স্যান্তোস। প্রধানমন্ত্রী ও কোচের আগে তার ক্লাব জুভেন্টাসও পাশে দাঁড়িয়েছে রোনালদোর।