তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দ্বিতীয় বৈঠকেও মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব তোলা হয়নি। তাই ফের ১৬ জুলাই তৃতীয় বৈঠকে বসর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সংক্রান্ত কমিটি।
রোববার দুপুর ৩টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক হওয়ার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে এ কথা জানান কমিটির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন মালিকদের প্রতিনিধি ও বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক প্রতিনিধি বেগম শামছুন্নাহার ভূঁইয়া, স্থায়ী শ্রমিক প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু, স্থায়ী মালিক প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দিন ও মজুরি বোর্ডের সচিব মো. শহীদুল্লাহ।
দীর্ঘদিন ধরে তৈরি পোশাক শ্রমিকরা নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা দাবি করে আসছেন। বর্তমানে তাদের এই মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা।
আমিনুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে মজুরি বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে মজুরি নির্ধারণে কোন কোন বিষয়গুলি বিবেচ্য এবং সর্বশেষ মজুরি নির্ধারণে কোন কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা পর্যালোচনা করা হয়েছে।
‘তবে চূড়ান্ত মজুরি নির্ধারণের আগে পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন করতে হবে। সেক্ষেত্রে মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধি উভয় পক্ষ থাকবেন বলে জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।’
তিনি বলেন, প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, মালিক এবং শ্রমিক উভয়পক্ষ মজুরি নিয়ে আলাদা প্রস্তাব দিবেন। কিন্তু এ জন্য উভয় পক্ষই আরো সময় চেয়েছেন। তাই ১৬ জুলাই পরবর্তী বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই বৈঠকের আগে তারা নিম্নতম মজুরির প্রস্তাব দিবেন। এরপর কারখানা পরিদর্শন ও বিদেশে বায়ারদের সাথে আলোচনা করে মজুরি চূড়ান্ত করা হবে।
পরে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মজুরি নির্ধারণে আমরা ১০ দিন সময় চেয়ছি। কিন্তু ৮ দিন সময় দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১৬ জুলাইর মধ্যে প্রস্তাব দেয়া হবে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইন। তাই এ লাইফ লাইনে যেন কোনো ধরনের আঘাত না আসে এবং শ্রমিক ও মালিক পক্ষ যেন ভালভাবে থাকতে পারে সে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারখানা মালিকদের সক্ষমতা এবং শ্রমিকদের প্রয়োজনিয়তা-এই দুইটা বিষয় বিবেচনা করে মজুরি হিসেব করতে হবে। সে হিসেবটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশাকরি আগামী বৈঠকে সেই প্রস্তাব দেয়া হবে।
চূড়ান্ত মজুরি ঘোষণা করতে আর কতদিন লাগবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, কারখানাগুলো পরিদর্শন করা হবে। এমনকি বিদেশে গিয়েও কারখানা পরিদর্শন করা হবে। এই জন্য কিছু সময় দরকার।
তিনি বলেন, মজুরি গঠনের জন্য হাতে ১ বছর সময় ছিল। কিন্তু তার আগেই আমরা বোর্ড গঠনের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি। সেই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অগাস্ট পর্যন্ত মজুরি নির্ধারণের সময় আছে। এরপর আরো ৩ মাস সময় নেয়া যাবে-এমন সুযোগও আছে। কিন্তু ওই সময় নেয়ার দরকার হবে না। এর আগেই মজুরি নির্ধারণ হয়ে যাবে।
পরে শ্রমিক প্রতিনিধি শামছুন্নাহার ভূঁইয়াকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আজ নিম্নতম মজুরির প্রস্তাব দেয়ার পুরোপুরি প্রস্তুতি ছিল কিন্তু হঠাৎ করে আবার সময় চাওয়া হচ্ছে কেন?
জবাবে তিনি বলেন, নিম্নতম মজুরির প্রস্তাব দেয়ার জন্য আজ আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু মজুরির গ্রেড নিয়ে একটা সমস্যা রয়েছে। আগে মজুরির গ্রেড ছিল ৭টা। এখন গ্রেড ৫টা করার জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দেখা গেল, গ্রেড কমালে শ্রমিকদের সমস্যা হতে পারে। তাই এটা পুনরায় বিবেচনা করা দরকার বলে মনেকরি।
‘তাছাড়া যেহেতু, মালিকপক্ষ যেহেতু সময় চেয়েছে তাই আমরাও সময় চেয়েছি। আশাকরি আগামী সভায় নিম্নতম মজুরির প্রস্তাব দেয়া হবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন শ্রমিকদের এই প্রতিনিধি।’
বোর্ড অফিসে বৈঠক শুরু হওয়ার পরপরই মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ের নিচে নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবিতে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
শ্রমিকদের সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নেতা সাদিকুর রহমান শামীম, রুহুল আমীন, ইকবাল হোসেন, নইমুল ইসলাম জুয়েল, আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ।
জানা যায়, বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর ১২ টায়। তবে তা পিছিয়ে বিকেল ৩টায় বৈঠক শুরু হয়। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী এদিন ১২টায় শ্রমিকরা এসে উপস্থিত হয়েছেন মজুরি বোর্ডের সামনে।
তবে কোনো সমাবেশ করেনি। কিন্তু বিকেল ৩ টায় বৈঠক শুরু হওয়ার পর পরই তারা সমাবেশ শুরু করেন। গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ব্যানারে সমাবেশ করেন শ্রমিক ও তাদের নেতারা।
সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, বোর্ড মজুরি নির্ধারণ নিয়ে তালবাহানা করছে। বছরের শুরুতে মজুরি নির্ধারনের কথা থাকলেও ৬ মাসেও তা করা হয়নি। এটা শ্রমিকদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা।
এ সময় তিনি অনতিবিলম্বে মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান।
গার্মেন্টস কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারাও ১৮ হাজার টাকা মজুরির দাবি জানান। তারা বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে ১৮ হাজার টাকার কম মজুরি নির্ধারণ করা হলে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে।
এর আগে গত ১৯ মার্চ প্রথম বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে মুরি নির্ধারণ করার জন্য মালিক ও শ্রমিকদের ৩ মাসের সময় দেয় বোর্ড।