দেশে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের উৎপাদন বাড়লে ওষুধের দাম অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করেন ওষুধ উৎপাদনকারীরা।
তারা বলছেন, বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদনের কাজে ব্যহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের সারিতে এখনও প্রবেশ করতে পারেনি। মোট চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি ৯৫ শতাংশ আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। যার প্রায় ৬০ শতাংশ আনা হয় প্রতিবেশী ভারত থেকে। বাকিটা চীন, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ওষুধ শিল্পের পণ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে ৯ম ‘এশিয়া ফার্মা এক্সপো-২০১৭’ তে অংশ নেওয়া বিভিন্ন কোম্পানীর উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে চ্যানেল আই অনলাইন। তাদের সঙ্গে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে।
দেশে উন্নত প্রযুক্তির যথেষ্ট অভাব এবং কাঁচামালের উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে না বলে মনে করেন উৎপাদনকারীরা। আর হাতেগোনা যে কয়েকটি কোম্পানী স্বল্পপরিসরে কাঁচামাল উৎপাদন করে, দাম বেশি হওয়ায় তা ওষুধ উৎপাদনকারীরা কম কেনে।
ওষুধ উৎপাদনকারীরা বলছেন, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের সহাযোগিতা থাকলে কাঁচামালের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এতে দেশের বাজারে ওষুধের দামও অনেকাংশে কমে যাবে।
প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া একটিভ ফাইন কেমিকেল লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) এ বি এম জামাল উদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কাঁচামাল আমদানি করে চূড়ান্ত পর্যায়ের ওষুধ তৈরি করে বাংলাদেশে এমন কোম্পানী রয়েছে ২৫০টি। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানী কাঁচামাল উৎপাদন করে। যা মোট চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ। তাই আমি মনে করি, যে যাই বলুক ওষুধে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। কারণ কাঁচামাল উৎপাদনে এখনও আমরা পিছিয়ে আছি।
তিনি আরো বলেন, সরকারের উচিত দেশে কাঁচামাল উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্য দেশের কোম্পানীগুলোর মধ্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা দেওয়া। না হলে উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেশের ৯৮ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের ১২৭টি দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি করে। সম্প্রতি বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধ শিল্পে মেধাস্বত্বেও ছাড় পেয়েছে। ফলে আগামী ১৭ বছর ওষুধ তৈরি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে মেধাস্বত্বখাতে বাংলাদেশকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না।
এছাড়া ওষুধ সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেখানে ২০১৬ সালের অক্টোবরেই উৎপাদনকারীদের মাঝে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
কাঁচামাল খাতে আমদানি খরচ ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সার্বিক দিক থেকে প্রস্তুত না হওয়ায় উদ্যোক্তারা এপিআই শিল্প পার্কে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
অবশ্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল আনতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রে দূর্ভোগে পড়তে হয় বলেও জানান আমদানিকারকরা।
এসিআই-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিদেশ থেকে কাঁচামাল কিনতে গিয়ে এলসি সংক্রান্ত অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। সময়মতো পণ্য পাওয়া যায় না। তাছাড়া পণ্য পরিবহন খরচও অনেক বেশি। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে কাঁচামাল উৎপাদন করা গেলে ওষুধ প্রস্তুতকারীদের খরচ ও ওষুধের দাম কমবে। একই সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থানও।
এপিআই শিল্প পার্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই পার্কে এখনও প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। শিল্প কারখানা স্থাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ব্যবস্থা করা হলে কোম্পানীগুলো সেখানে অবশ্যই যাবে।