ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। বুধবার বেলা সাড়ে নয়টায় ভিসি অফিসে যোগদানপত্রে সই করে নতুন দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। এরপর নতুন ভিসিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সহকর্মীরা।
তবে পূর্বের ভিসির কাছ থেকে নতুন ভিসির দায়িত্ব বুঝে নেয়ার যে ঐতিহ্য সেটি মানা হয়নি এবার। অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকও উপস্থিত ছিলেন না। এ বিষয়ে নতুন ভিসি বলেছেন, সময়ের সমন্বয় হয়নি বলে এবার তা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা আমার দায়িত্ব। আমি দুঃখিত যে ঢাকার বাইরে থকাতে দায়িত্ব গ্রহণে দেরি হয়ে গেলো। গতকাল এসে পরিস্থিতিটা একটু বুঝার চেষ্টা করেছি। আর আজ সকালেই দায়িত্ব বুঝে নিয়েছি। এটি সম্পূর্ণ সাময়িক দায়িত্ব। যেকোন সময় আমার অন্য চেয়ারে যেতে হতে পারে।
এখানে আর কোন আনুষ্ঠানিকতা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, উপাচার্যের পদ এরকমই। যোগদান করা। রাষ্ট্রপতির নিদের্শনা কার্যকর করাই দায়িত্ব।
তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের যে একটি ঐতিহ্য ও মর্যাদা আছে সেটি যেন সবাই মিলে সমুন্নত রাখতে পারি এবং দায়িত্বশীল থেকে যেন কাজ করি সেই চেষ্টা থাকবে আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমান আচরণ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাকে। আমার বিবেচ্য হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত সহকর্মী এবং ঢাবি পরিবারের সকলকে সঙ্গে নিয়ে সংহত আচরণের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে গবেষণার বাজেট বৃদ্ধির কথা বলেন নতুন ভিসি। তিনি জানান, আমরা কিছু উদ্যোগ নিব, যাতে গবেষণার বাজেট বাড়ানো যায়। আমাদের অর্থকড়ি আসে ইউজিসি’র মাধ্যমে। সেটি একেবারে নির্ধারিত। ফলশ্রুতিতে এখানে অন্য ধরনের একটি সিদ্ধান্ত লাগবে। আমাদের উদ্যোগ লাগবে। এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গবেষণার খাতটি সেভাবে এগুতে পারেনি। হয়তোবা স্বল্প পুঁজির কারণে। এটি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের অনেক সমস্যা আছে। সমাধানের জন্য আগে যারা ছিলেন তারাও সব ধরনের প্রয়াস চালিয়েছেন। এসব সমস্যা সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হয়। এটি চলমান প্রক্রিয়া। আগে যারা কাজ করেছেন তাদের কাজগুলো ক্রমান্বয়ে কিভাবে ভালোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটির প্রয়াস থাকবে আমাদের। এখানে এমন নয় যে, পূর্বে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা ভালো কাজ করেননি। আমাদের সব সময় লক্ষ্য থাকবে সবার জন্য ভালো কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়া।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে ভিসির আলাপচারিতায় ডাকসুর প্রসঙ্গও উঠে আসে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নতুন উপাচার্যের কাছ থেকে ডাকসু নির্বাচন প্রত্যাশা করেন; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাকসুর বিষয়টি এমন, যেখানে একক কোন সিদ্ধান্ত হয় না। ডাকসু নির্বাচন হলো একটি ব্যাপক উদ্যোগ। অনেকগুলো উপাদান কাজ করে এখানে। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার আছে। তাদের সবাইকে সাথে নিয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্ন ইউনিট গুলোর সাথে অন্তত একটি সমন্বয়কের ভূমিকা কোথাও না কোথাও লাগবে।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, আমি যখন চেয়ারের বাইরে ছিলাম তখনও বলেছি, এ বিষয়ে কোথাও না কোথাও থেকে একটি উদ্যোগ লাগবে। এ বিষয়টি আমাদের বিভিন্ন ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।
ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রধান বাঁধা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, এখনও আমি এটি অনুসন্ধান করিনি। আমি যখন অন্য জায়গায় ছিলাম তখন ভাবতাম যে সবই সহজ। কিন্তু চেয়ারে আছি এখন। বিভিন্ন ফোরামে বসে আলোচনা করত হবে। খুঁজে বের করতে হবে কোথায় বাঁধা আছে।অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক চেয়ারম্যান। এছাড়া উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি কলা অনুষদের ডিন, কবি জসীম উদদীন হলের প্রাধ্যক্ষ এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট মেম্বার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
গত ২৩ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং সিনেট মনোনীত উপাচার্য প্যানেল আদালতে স্থগিত হওয়ায় আখতারুজ্জামানকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।